লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্যক্তিগত, পরিবার ও জীবনের টানাপোড়েন, অফিসের কাজের চাপ বা প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঝগড়া- এই ধরনের বিষয়গুলো এড়ানো যায় না। কারণ একেক জনের মানসিকতা একেক রকম। আর অনেক সময় মতের মিল না হওয়াতে তর্কবিতর্ক লেগেই যায়। সেখান থেকে খুব বেশি হলে মেলে মানসিক অশান্তি।
তবে ছোট ছোট পরিবর্তন মানসিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবেও প্রভাবিত করতে পারে। না বলতে শেখা এবং সময়কে গুরুত্ব দেওয়া অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক চাপে পড়ে এমন কিছু কাজ করতে হয় যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সিয়াটলভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী অ্যান মেরি রোপ রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন, “ভবিষ্যতের বিষয়ে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকলে অনেক কিছুতে সম্মতি দেওয়া হয়ে যায়, পরে যা চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে এটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ সামাজিক দায়বদ্ধতা ব্যক্তিগত সময়কে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত করতে পারে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবতে হবে, কাজটি আগামীকালই করতে হবে এতে কি সম্মত আছেন? যদি না হন তাহলে বিনয়ের সাথে না বলতে হবে।
নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা নেতিবাচক চিন্তা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শক অলিভিয়া ভারহুলস্ট একই প্রতিবেদনে বলেন, “অনেক সময় মনে নেতিবাচক চিন্তা আসে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অনুভূতি মানেই বাস্তবতা নয়।”
চাকরিজীবীদের মধ্যে ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’ ব্যাপকভাবে দেখা যায়, যেখানে তারা নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা মোকাবিলা করতে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, ‘আমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আমাকে এই জায়গায় এনেছে, তাই আমি এটির যোগ্য।’
একঘেয়েমি কাটিয়ে সৃজনশীল হওয়া একটানা দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে ফেলে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ ব্রডবেন্ট বলেন, “একঘেয়েমি কাটাতে মাঝে মাঝে অন্য কাজে যুক্ত হওয়া দরকার, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।”
শহুরে জীবনে সময়ের অভাব থাকলেও ছোটখাটো সৃজনশীল কাজ, যেমন— বাগান করা, ছবি আঁকা বা রান্না করা- এই ধরনের কাজ করলে মস্তিষ্ক নতুন চিন্তা করার সুযোগ পায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
শীত মানেই বিষণ্ণতা নয়
শীতকালে অনেকের মন খারাপ থাকে। তবে গবেষণা বলছে, শীত মানেই বিষণ্ণতা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কারি লিবোইটস বলেন, “উত্তরাঞ্চলের দেশগুলোতে দিনের আলো কম থাকলেও মানুষের মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হয় না।”
বাংলাদেশে শীতকাল অনেকের কাছে উপভোগ্য হলেও কিছু মানুষ শীতের সময় কর্মক্ষমতা কম অনুভব করেন। এর সমাধান হতে পারে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ সময় কাটানো, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়া
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মানসিক চাপ কমে এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেলিসা শেফার্ড বলেন, “কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একটি অভ্যাস, যা নিয়মিত চর্চা করলে স্বাভাবিক হয়ে যায়।”
কর্মব্যস্ত জীবনে ছোট ছোট আনন্দকে উপভোগ করা এবং অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্পর্কগুলোকে মজবুত করে তুলতে পারে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস গড়ে তোলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও দাঁড়ানো
ভালো ভঙ্গিতে বসা এবং হাঁটা শরীরের পাশাপাশি মনকেও প্রভাবিত করে।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলিজাবেথ ব্রডবেন্ট বলেন,“ভালো ভঙ্গিতে বসলে মানুষ বেশি আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক অনুভব করে।”
বাংলাদেশের অফিস সংস্কৃতিতে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করার প্রবণতা আছে। তাই সময় নিয়ে সঠিকভাবে বসা ও মাঝে মাঝে উঠে হাঁটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধৈর্য্য ধরার অভ্যাস গড়া
পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রের অনেক বিষয়ে অস্থির হলে মানসিক চাপ বাড়ে।
ফিলাডেলফিয়া’র মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ আর্নশ বলেন, “রাগ বা হতাশা অনুভব করলে আগে নিজের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ধীরে ধীরে ধৈর্য্য ধরার চর্চা করতে হবে।”
ট্রাফিক জ্যাম, লম্বা লাইনে অপেক্ষা, অথবা কর্মক্ষেত্রে চাপের মধ্যে ধৈর্য্য ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়।
সাহায্য চাইতে হবে
অন্যদের সাহায্য চাইতে সংকোচ বোধ করেন অনেকে, যা মানসিক চাপ বাড়ায়।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যামি গর্ডন বলেন, “মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যকে সাহায্য করতে চায়। তবে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের প্রয়োজন প্রকাশ করলে, তারা বুঝতে পারবে না ঠিক কোনভাবে সাহায্য করতে হবে।”
পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে অন্যদের সাহায্য নেওয়াকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সঠিকভাবে সাহায্য চাওয়াটা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব
অন্যকে সাহায্য করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।
ইলিনয়’য়ের ওক পার্কের ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী এমিলি এডলিন বলেন, “সরাসরি উপদেশ না দিয়ে বরং প্রশ্ন করুন, ‘আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?’ এতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।”
যে কোনো অবস্থাতেই সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে সম্পর্ক আরও ভালো হয় এবং নিজের মধ্যেও ইতিবাচক অনুভূতি তৈরিতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিত করা
মানসিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. রবার্ট বস বলেন, “যথেষ্ট ঘুম না হলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং দৈনন্দিন কাজের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়।”
নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, ফোনের ‘স্ক্রিন টাইম’ কমানো এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।