লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রেমে পড়ার নির্দিষ্ট বয়স হয় না, যে কোনও বয়সেই মানুষ প্রেমে পড়তে পারেন। বয়ঃসন্ধিতে যেমন মানুষ প্রেমে পড়তে পারেন। তেমনি আবার ৮০ বছর বয়সেও অনেকে প্রেমে পড়েন। কেউ কেউ তো একটা সম্পর্কে থাকতে থাকতেই অন্যের ভালোবাসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। এভাবে প্রেমে পড়া কিন্তু কোনও ফৌজদারি অপরাধ নয়। না হলে পদ্মা নদীর মাঝি, লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার, মাধুকরী, লোলিতা, রাত ভরে বৃষ্টির মতো কালজয়ী সাহিত্যকর্ম এক পলকে মিথ্যে হয়ে যায়! ভালোবাসা পাপ নয় ঠিকই, তবে বারবার প্রেমে পড়ার অভ্যেস কিন্তু একাধিক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে একজন ব্যক্তিকে।
বিশেষ করে ওই ব্যক্তি যদি আগে থেকেই কোনও সম্পর্কে থাকে, তাহলে জটিলতা আরও বাড়ে। একটা সম্পর্ক ভেঙে অন্য সম্পর্কে যাওয়া নিশ্চিতরূপে দুষ্কর্ম নয়। বিশেষ করে পুরুষ হোক না নারী, গার্হস্থ্য হিংসা, প্রতারণা, মানসিক অত্যাচারের শিকার হলে সম্পর্ক অবশ্যই ভেঙে দেওয়াই উচিত। তবে এমন কোনও ঘটনা না ঘটার পরেও, একটার পর একটা সম্পর্ক ভেঙে অন্য সম্পর্ক গড়ে তোলা ডেকে আনতে পারে নানাবিধ জটিলতা। একবার, দু’বার নয় ঘন ঘন এমন হলে কিন্তু বিষয়টা আর শুধু ‘নিছক আকর্ষণ’ থাকে না।
হতেই পারে এভাবে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পিছনে কোনও বিশেষ কারণ লুকিয়ে আছে! আবার হতেই পারে ওই ব্যক্তির মতি স্থির নেই। কিংবা অল্পেই তিনি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে অ্যাডাল্ট এডিএইচডি থাকলে এই ধরনের মানসিক টোনাপোড়েনে ওই ব্যক্তি ভুগতে পারেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এডিএইচডি কোনও নতুন বিষয় নয়। অনেক ব্যক্তিই ‘অ্যাডাল্ট এডিএইচডি’-এর শিকার। এই ধরনের ব্যক্তির প্রথম প্রথম বিভিন্ন বিষয়ে চরম উৎসাহ থাকে। দেখা যায়, গোড়ার দিকে গান শেখা, ছবি আঁকা, লেখালেখির মতো কাজ নিয়ে তাঁদের প্রচুর উৎসাহ থাকে। শুরুও করেন অনেক আগ্রহ নিয়ে। তবে কয়েকদিন পরই সেই বিষয়ের থেকে আগ্রহ হারিয়ে যেতে থাকায় রণে ভঙ্গ দেন। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
এই ধরনের ব্যক্তিরা কোনও ব্যক্তির আপাত গুণাবলির প্রতি চট করে আকর্ষিত হয়ে পড়েন। যেমন, কোনও ব্যক্তির দেহসৌষ্ঠব এঁদের ভালো লাগতে পারে। আবার কারও মুখশ্রী দেখেই ওই ব্যক্তির প্রেমে পড়ে যান। কারও হয়তো বা পোশাক পরার আদব বা রুচি পছন্দ হয়। এমনকী প্রেমে পড়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে গানের গলা, গিটার বাজানোর দক্ষতাও। অর্থাৎ ব্যক্তিগত পরিসরে মানুষটি কেমন, তার বাহ্যিক রূপ বা গুণের বাইরে মানুষটি সামগ্রিকভাবে কেমন তা বিচার করার মতো ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে না। মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খান।
এখন বিষয়টা হল, একটা রিলেশনশিপ তৈরি হওয়ার জন্য শুধু দেখতে ভালো হওয়া বা গানের গলা মধুর হওয়াই যথেষ্ট নয়। প্রতিটি সম্পর্ককে সময় দিতে হয়। এভাবেই পরস্পরের প্রতি তৈরি হয় নির্ভরতা। অথচ এডিএইচডি থাকার কারণে খুব দ্রুত তাঁরা নতুন সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। নতুন সম্পর্ক তৈরির সময় তাঁরা হঠাৎ করে বুঝতে পারেন একঘেয়েমি গ্রাস করছে। সম্পর্কের গভীরে যাওয়ার মতো উৎসাহ যেন তখন আর তার থাকে না। ফলে ফের নতুন কোনও সম্পর্কের মধ্যেই তাঁরা তাঁদের বেঁচে থাকার রসদ খুঁজতে থাকেন।
কেন হয় এমন? আসলে প্রেমে পড়লে আমাদের শরীরে একটি বিশেষ হরমোন ক্ষয় হয়। হরমোনটির নাম ডোপামিন। এই বিশেষ হরমোনটি আমাদের পুরস্কার প্রাপ্তির মতো আনন্দ দেয়। সিগারেটে থাকা নিকোটিনও কিন্তু আমাদের ব্রেনে এই বিশেষ নিউরোট্রান্সমিটার বা হরমোনটির নিঃসরণ ঘটায়। ফলে একজন ব্যক্তির মাথায় বারবার ধূমপানের ইচ্ছে তৈরি হয়। তিনি আসলে মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া আনন্দ অনুভূতির পিয়াসী হয়ে ওঠেন। প্রকৃতপক্ষে নিকোটিন নয়, ধূমপায়ী আসক্ত হন ডোপামিনে! এভাবেই আরও বেশি বেশি আনন্দ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সিগারেটের নেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
এডিএইচডি থাকলেও ঘটনা কিছুটা সেইরকমই ঘটে।
কোনও ব্যক্তি নতুন প্রেমের মাধ্যমে বারবার ডোপামিনের প্রত্যাশী হন। অবশ্য বাইপোলার ডিজঅর্ডার থাকলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ বাইপোলার ডিজঅর্ডারের সমস্যায় ভোগা মানুষের সব ধরনের ইচ্ছেই বড় বেশি অতিরিক্ত মাত্রায় থাকে। এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির ফিজিক্যাল এনার্জিও থাকে যথেষ্ট বেশি মাত্রায়। এছাড়া অস্মিতা বোধ থাকতে পারে প্রবল। তার মনে হতে পারে সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সবার সঙ্গেই সে যেচে আলাপ করতে যায়। সবার সঙ্গেই সে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ কি নেওয়া উচিত?
কিছু মানুষের এভাবে বারবার প্রেমে পড়ার মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকতেই পারে। সকলেরই যে এডিএইচডি বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার থাকবে তা নয়। তাছাড়া, যিনি ঘন ঘন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন তিনি তো বুঝতে পারেন যে আসলে যা কিছু ঘটছে তার পিছনে হরমোনের কারসাজিও দায়ী থাকতে পারে! তবে হ্যাঁ, হঠাৎ ছিঁড়ে ফেলা সম্পর্ক বা মাঝপথে ছেড়ে আসা সম্পর্ক চট করে পিছু ছাড়তে চায় না। তখনই এক ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমন টানাপোড়েনে অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। এছাড়া অজান্তেই গড়ে ফেলা এমন সম্পর্কগুলি মানসিকভাবেও ওই ব্যক্তিকে সুস্থির থাকতে দেয় না। অনেকেই তখন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেন। সেই সময় ওই ব্যক্তির এডিএইচডি বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার থাকলে ধরা পড়ে যেতে পারে। কারও এই ধরনের সমস্যাগুলি আছে কি না তা বুঝতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু প্রশ্ন করেন ও মাপদণ্ডের সাহায্যে বিচার করেন। তারপরেই কোনও ব্যক্তির এডিএইচডি বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার আছে তা বলা যাবে।
বহু সুন্দরীর সঙ্গে বিছানায় গিয়েছিলেন সানি দেওল, এখন রাত কাটে একজনের সঙ্গে
চিকিৎসা পদ্ধতি
এডিএইচডি বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার থাকলে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়া কাউন্সেলিং করানোও হয়। এভাবেই মানুষ ভালো থাকেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।