মানুষের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে এই প্রাণী

লাইফস্টাইল ডেস্ক : অক্সিজেন ছাড়া মানুষের পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়৷ কিন্তু শুধু নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নয়, শরীরের অঙ্গগুলিতেও অক্সিজেনের অভাব ঘটলে সংকট সৃষ্টি হয়৷ একটি প্রাণী মানুষের সেই অভাব মেটাতে সহায়ক হতে পারে৷ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে জার্মানি সংবাসদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

এই প্রাণীটি অন্য কিছু নয় কেঁচো। এর ল্যাটিন নাম আরেনিকোলা মারিনা৷ ৩৫ কোটি বছর ধরে মানুষের আঙুলের মতো পুরু ও ৪০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই প্রাণী পৃথিবীতে বাস করছে৷

সেই কেঁচোর শরীরে এমন এক পদার্থ আছে, যা মানুষের জরুরি প্রয়োজন৷ বালুখেকো এই প্রাণীর রক্তের যে উপাদান শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে, সেই হিমোগ্লোবিন মানুষের কাজে লাগতে পারে৷ ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ইয়ানিক ল্য ম্যোর বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমরা এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি, যা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে৷ কিন্তু কিছুই পাই নি৷ এটা সত্যি বড় এক খবর৷’

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে ফ্রাংক সাল প্রায় ২৫ বছর আগে এমন প্রাণী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন, যেগুলি কঠিন পরিবেশে বাস করে৷ সে সময়কার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে সবাই আমাকে নিয়ে হেসেছিল৷ বলেছিল, সামুদ্রিক ওয়ার্ম নিয়ে কী যে বলে! আমরা চিকিৎসক, আর তুমি হাসপাতালে ওয়ার্ম নিয়ে কথা বলছো? আমি জানতাম, বালুর মধ্যে আরেনিকোলা মারিনা নামের এই লাগওয়ার্ম থাকে৷ মনে প্রশ্ন জাগলো, জোয়ার ও ভাটার সময়ে সেই প্রাণী কীভাবে নিঃশ্বাস নেয়? সেটা ছিল নিতান্ত মৌলিক গবেষণা, সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত এক জিজ্ঞাসা৷ পরীক্ষা করে দেখলাম যে সেই ওয়ার্ম ভাটার সময় নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়৷ শুধু পানির নীচে নিঃশ্বাস নেয়৷”

লাগওয়ার্মেরও মাছের মতো কানকো আছে৷ কিন্তু ভাটার সময়ে সেটির দম বন্ধ হয়ে যায় না, প্রাণীটি বরং নিঃশ্বাস ধরে রাখে৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ফ্রাংক সাল জানালেন, ‘সেই ওয়ার্ম পরীক্ষা করে বিশেষ এক অণু শনাক্ত করলাম৷ সেটি লোহিত রক্ত ​​কণিকায় থাকে না, রক্তের মধ্যেই ভেসে বেড়ায়৷ মানুষের হিমোগ্লোবিনের গঠনের সঙ্গে সেটির অনেক মিল রয়েছে৷’

ব্রেস্ট শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইয়ানিক ল্য ম্যোর লাগওয়ার্মের সেই গুণের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন৷ ইয়ানিক মনে করিয়ে দিলেন, ‘এই প্রেপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেটি টিস্যুর মধ্যে অক্সিজেন আনতে পারে৷ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর সেটাই অন্যতম প্রথম কাজ৷ কারণ আমরা জানি, যে প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার সময় অঙ্গের অক্সিজেন লাগে৷’

শুধু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়েই সেই আবিষ্কার কাজে লাগে না৷ শরীরের কোনো অংশে অক্সিজেন কমে গেলেই ওয়ার্ম হিমোগ্লোবিন প্রয়োগ করা সম্ভব৷

একটি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সেটা দেখানো হচ্ছে৷ মানুষের রক্তের কোষে হিমোগ্লোবিনের তুলনায় লাগওয়ার্মের অণু প্রায় ৪০ গুণ বেশি অক্সিজেনের পরমাণু বহন করতে পারে৷

এবার নোবেলকে ভারতে ঢুকতে না দেওয়ার ডাক

একই সঙ্গে সেটি রক্তের কোষের তুলনায় অনেক ছোট৷ এমনকি ভেসেল বা ধমনী সংকীর্ণ বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও সেটি চলাচল করতে পারে৷ ফলে স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেটি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে৷ স্বাভাবিক সময়ে ক্ষত না সারলে অথবা কোভিড ১৯ সংক্রমণের কারণে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিলেও হয়তো সেই প্রক্রিয়া কাজে লাগবে৷ ফ্রাংক সাল বলেন, ‘আসলে আমরা অসংখ্য ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের কথা ভাবতে পারি৷ সাধারণ ওয়ার্ম থেকে পাওয়া অক্সিজেনের বাহক এমনভাবে কাজে লাগতে পারে৷’