আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও গাম্বিয়ায় কাশির সিরাপ সেবনে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগর তীর উঠেছে ভারতীয় সিরাপ প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় কোন দেশই তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। শোকাহত বাবা-মা অপেক্ষায় রয়েছেন বিচারের।
আদালতের নথি বিশ্লেষণ করে, দুই ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার ও ভারতীয় দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পেয়েছে যে, ভারত, ইন্দোনেশিয়া,গাম্বিয়া, উজবেকিস্তানের শিশুর মৃত্যুর পেছনে কফের সিরাপের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে এসব সিরাপ প্রস্তুতকারকরা তাদের সিরাপগুলি পরীক্ষা করেনি বা তদন্তকারীদের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি যে তারা যা করেছে ভারতীয় আইন অনুসারে।
এদিকে এ বিষয়ে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ফেডারেল ওষুধ নিয়ন্ত্রক এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভারত, উজবেকিস্তান এবং গাম্বিয়ায় এসব কাশির সিরাপ তিনটি ওষুধ প্রস্তুতকারক– ডিজিটাল ভিশন, মেরিয়ন বায়োটেক এবং মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে কিনেছে। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানই তা অস্বীকার করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, তিনটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানই কীভাবে তাদের উৎপাদন কমিয়ে ফেলেছে।
রয়টার্স গবেষণা করে দেখেছে যে, ভারতের ডিজিটাল ভিশন এবং ওরিসন ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠার পর থেকে বুকজ্বালা, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অন্যান্য ওষুধ বিষয়ে নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অন্তত ১৬টি সতর্কবার্তা পেয়েছে। অন্যদিকে
অন্যদিকে গাম্বিয়ার শিশুর মৃত্যুর পেছন মেডেন ফার্মার কফের সিরাপ দায়ী বলে অভিযোগ করেছে দুটি কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তারা।
সাতটি ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল এক্সিকিউটিভ এবং নিয়ন্ত্রক রয়টার্সকে বলেছেন, কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিরাপ প্রস্তুতের সময় সস্তা, বাণিজ্যিক গ্রেডের উপাদান ব্যবহার করেছে। তবে তারা কোম্পানিগুলোর নাম বলতে সম্মতি জানায়নি।
জম্মু এবং কাশ্মীরে ডিসেম্বরে ডিজিটাল ভিশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রস্তুতে বিষ ব্যবহারের অভিযোগে এনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। এই অভিযোগে দণ্ডিত হলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার কথা।
সম্প্রতি কিডনির জটিলতায় গাম্বিয়ায় অন্তত ৭০ শিশুর মৃত্যুর জন্য ভারত থেকে আমদানি করা চারটি কফের সিরাপকে দায়ী করেছে দেশটির সরকারের গঠিত একটি টাস্কফোর্স।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে, এসব ওষুধে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মাত্রায় ডাইথাইলিন গ্লাইকোল ও ইথিলিন গ্লাইকোল ছিল, যা সাধারণত মোটরযন্ত্রে ব্যবহার করা হয় এবং এটি খাওয়া হলে শরীরে গুরুতর বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এই বিষক্রিয়ায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
গাম্বিয়ায় কাশির সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর এমন কেলেঙ্কারির পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং গত অক্টোবরে সিরাপ প্রস্তুতকারক মেডেন ফার্মা বন্ধ করে দেয়।
এদিকে গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও উজবেকিস্তানে কফের সিরাপ খেয়ে ৩০০ শিশুর মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসংগতিপূর্ণ এবং ভেজাল ওষুধ নির্মূল করতে ‘তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।