জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগের ফলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধিক্ষেত্র ছোট হয়ে এসেছে। গাজীপুরের ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রাজউকের অধিক্ষেত্রের ভেতর ছিল। এখন এলাকাটি রাজউকের হাতছাড়া হয়ে গেছে। ফলে রাজউক এখন তাদের অধিক্ষেত্র বাড়াতে পদ্মা সেতু ও মেঘনা নদী পর্যন্ত হাত বাড়িয়েছে। এই এলাকা যুক্ত হলে গাজীপুরের সমান এলাকা আবার রাজউকের মানচিত্রে স্থান পাবে। ফলে বর্তমানে রাজউকের অধিক্ষেত্রের যে মানচিত্র রয়েছে তা বদলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে শিগগিরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক।
এদিকে অধিভুক্ত এলাকার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই নগর পরিকল্পনাবিদদের। তারা বলছেন, নতুন করে এলাকা বর্ধিত করার পরিকল্পনা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নেপথ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কোনো ইচ্ছা রাজউকের আছে কিনা। তাদের মতে, শুধু কাগজে কলমে এলাকা বর্ধিত করার পরিকল্পনা থেকে অধিক্ষেত্র বাড়ানোর চিন্তা করলে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব হবে না। সবার আগে প্রয়োজন রাজউকের সক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি অন্যান্য যেসব সংস্থা রয়েছে, যেমন সাভার পৌরসভা বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান- তাদের হাতে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত।
এমন এক বাস্তবতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা পদ্মা সেতু এবং মেঘনা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চায়। যেহেতু রাজউক থেকে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে চলে গেছে। তাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের অধিক্ষেত্র এলাকা পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ নিয়েছে। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগের পর থেকে রাজউক এই কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে।
বিদ্যমান এলাকায় উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে রাজউক, সেখানে এলাকা বাড়ানোর প্রস্তাব কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, রাজউক তাদের অধিক্ষেত্র এলাকায় উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। তবে পদ্মা সেতু পর্যন্ত যেভাবে আবাসন গড়ে উঠছে, সেখানে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু সেটি রাজউক করবে, নাকি অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে করাবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজউকের অধিক্ষেত্র বাড়ানোর চেয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। কোথায় কীভাবে ভবন হয়ে যাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না রাজউক। বরং সাভারের মতো এলাকায় যেখানে পৌরসভা রয়েছে। সেসব জায়গার উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পৌরসভা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
রাজউকের প্রস্তাবে সরকারের সায় মিললে সংস্থাটির অধিক্ষত্র এলাকা পুনর্বিন্যস্ত হবে। উত্তর থেকে অধিক্ষেত্র এলাকা ছুটে যাওয়ায় দক্ষিণের দিকে নজর দিয়েছে রাজউক। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ও সেখানে একজন নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার ফলে সেখানকার উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নিজেদের অধীনে নিয়েছে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ফলে রাজউক উত্তরে ছোট হয়েছে, তাই দক্ষিণে নজর দিয়েছে।
ড্যাপের পরিচালক ও রাজউক নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর আলাদা কর্তৃপক্ষ হওয়ায় রাজউকের একটা বিরাট অংশ চলে গেছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় পদ্মা সেতু পর্যন্ত এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। সেখানে রাজউক যদি তার অধিক্ষেত্র বিস্তৃত করে পদ্মা সেতু পর্যন্ত নিতে পারে, তাহলে এসব এলাকায় পরিকল্পিতিভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই রাজউকের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার যদি সম্মতি দেয়, তাহলে রাজউকের অধিক্ষেত্র পুনর্বিন্যাস হবে।
রাজউক গঠনের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখে গেছে, ১৯৫৩ সালে প্রণীত দি টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩ আইনের আওতায় ১৯৫৬ সালে ঢাকা এবং এর পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোর উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে সর্ব প্রথম ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত তৎকালীন ডিআইটি পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক হিসেবে পরিবর্তিত হয়। এরপর ১৯৮৭ সালে রাজউকের অধিক্ষেত্র সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত হয়।
বর্তমানে পরিকল্পিত আবাসন উন্নয়নে রাজউকে একজন চেয়ারম্যান এবং পাঁচ সদস্যের পর্ষদের পরিচালনায় রাজধানী ও এর আশপাশের রাজউক অধিভুক্ত শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকার পরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগর ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতদিন রাজউক গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা দিলেও এখন থেকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব পরিকল্পনায় চলবে। রাজউক অধিক্ষেত্র এলাকা দক্ষিণে ধলেশ্বরী জোরা ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যেহেতু গাজীপুুর অংশ নেই, তাই সংস্থাটির পরিকল্পনা দক্ষিণ দিকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত অধিক্ষেত্র এলাকা বর্ধিত করা।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ। এতদিন সেভাবে কাজ না করলেও সম্প্রতি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিযুক্তির পর সেখানে আলাদা সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়েছে।
পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ায় তার আশপাশের এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়ণ সময়ের দাবি বলেও মনে করেন রাজউকের কর্মকর্তারা। আগে থেকে পরিকল্পিত নগরায়ণ না হলে পদ্মা সেতুর আশপাশের পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তবে অধিক্ষেত্র বাড়ানোর প্রয়োজন কি উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করা, নাকি নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রাজউকের এই সিদ্ধান্ত সরকারের কাছে গেলে সেটি কীভাবে মূল্যায়ন হয় তার ওপর নির্ভর করছে রাজউক বড় হবে নাকি ছোট হয়েই থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।