বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে করার বিষয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস। চীনে নারী-পুরুষ অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়ায় অনেক পুরুষ অন্য দেশ থেকে স্ত্রী আনার পরিকল্পনা করায় এটিকে কেন্দ্র করে একটি চক্র মানবপাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের এ বার্তায় ঝুলে গেলো বাংলাদেশি নাগরিক সুরমার ভাগ্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুণ্ডা গ্রামের কোনাপাড়ার সুরমা আক্তারকে বিয়ে না করেই ফিরে যাচ্ছেন চীনা নাগরিক ওয়াং তাওজেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) তিনি নাসিরনগর ছাড়েন। আপাতত ঢাকায় অবস্থান করে তিনি চীনে ফিরে যাবেন।
প্রেমের টানে চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন চীনের নাগরিক ওয়াং তাওজেন নামে এক যুবক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা সুরমা আক্তারের সঙ্গে রোববার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি হয়ে উঠেনি। সোমবারও সম্ভব হয়নি। আইনি জটিলতায় তাদের বিয়ে আটকে যায়। এরই মধ্যে তাওজেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আদালতে বিয়ে পড়াতে এসে আইনজীবীরা চীনা দূতাবাসের পরামর্শ নিতে বলেন। চীনা দূতাবাসে যাওয়ার পর সেখান থেকে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে সেখান থেকেও বিয়ের আইন বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখা পাওয়া যায়নি। কুণ্ডা গ্রামের কোনাপাড়ায় যেন চীনা নাগরিককেই নিয়ে যত আলোচনা। একটু পরপর লোকজন আসছে তাওজেনকে দেখতে। লোকজন সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারের সদস্যদের।
প্রায় দেড় মাস আগে সুরমা ও তাওজেনের মধ্যে পরিচয়। ধীরে ধীরে প্রেম। ৩১ অক্টোবর চীনা যুবক বাংলাদেশে আসেন। সুরমাকে বিয়ে করতেই তার ছুটে আসা। প্রেমের টানে চীনা যুবক বাংলাদেশে চলে আসার ঘটনায় এলাকাতেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চীনা যুবককে দেখতে অনেকেই সুরমাদের বাড়িতে আসা শুরু করেন। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
সুরমা জানায়, ‘তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। দেড় মাস আগে ‘ওয়াল টক’ নামে একটি অ্যাপস এর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। এর পর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতির মাধ্যমে তাদের বিয়ের বিষয়ে একমত হলে তাওজেন বাংলাদেশে আসেন। এয়ারপোর্ট থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দু’দিন ধরেই তাদের বিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করছে পরিবার।
সুরমার মা নুরেনা বেগম জানান, ‘তার মেয়ের ভালবাসা পেতে চীনের যুবক চলে এসেছে। মেয়েকে বিয়ে করতে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে বলে জানায়। সে অনুযায়ী সে মুসলমান হয়েছে। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি সমাধান করা যায়নি।’
বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে করার বিষয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সতর্কবার্তায় চীনা নাগরিকদেরকে বিদেশি নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে নিজ দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ ম্যাচমেকিং এজেন্টদের এড়িয়ে চলতে এবং শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত আন্তঃসীমান্ত ডেটিং বিষয়ক বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দূতাবাস বলছে, ‘বাংলাদেশে বিয়ে করার আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
জানা গেছে, চীনে নারী-পুরুষ অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়ায় অনেক পুরুষ অন্য দেশ থেকে স্ত্রী আনার পরিকল্পনা করছেন। আর এই সুযোগে কিছু এজেন্সি টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর সন্ধান দেয়ার নামে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ছে।
দূতাবাস জানায়, চীন সরকার কোনো সংস্থাকে আন্তঃসীমান্ত বিয়ের ম্যাচমেকিং পরিষেবা চালানোর অনুমতি দেয় না। এ কারণে এসব এজেন্টদের এড়িয়ে চলতে এবং অনলাইন রোমান্স স্ক্যাম থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে আর্থিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সুরমার চাচা বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে ও আদালতে গিয়ে বিয়ে পরাতে ব্যর্থ হই। আইনি জটিলতা থাকায় চীনা দূতাবাসে যাই। সেখান থেকে জানানো হয় সেদেশের সরকার এ বিষয়ে বার্তা দিয়ে রেখেছেন। তারা আইন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে বলা হয় এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাওজেনকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। তাকে বলেছি তাদের দেশ থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে। সেও আশ্বস্থ করেছে আইনি প্রক্রিয়া ঠিকঠাক মতো হলেই সুরমাকে বিয়ে করবেন। আপাতত তিনি চীনে চলে যাবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



