লাইফস্টাইল ডেস্ক: বাংলাদেশের সমাজে যেসব নারীরা তাদের বয়সে ছোট কোন পুরুষকে বিয়ে করেন তাদের প্রায়ই সামাজিক নানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে হয়। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক ফারহানা পারভীন-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
সমস্যার শুরুটা প্রথমত পরিবারের ভিতর থেকেই আসে। যদিও বয়সে ছোট পুরুষ বিয়ে করা এখন নতুন কোন বিষয় নয় – তারপরেও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা আশে-পাশের মানুষের কাছে কটুকথা শুনতে হয় এখনো। ফলে অনেক সময় পরিবারগুলো যৌথ পরিবার ছেড়ে একক পরিবার থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
দুই পরিবার যেখানে রাজি
শামীমা ইয়াসমিন একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন তার থেকে চার বছরের ছোট একজনকে।
এই বয়সের তফাত নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে যেমন কোন রাখঢাক নেই, তেমনি দুই পরিবারই বিয়েটি সানন্দে মেনে নিয়েছেন।
“আমার স্বামী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত জুনিয়র ছিল। সে আমাকে ভালোবাসত। কিন্তু আমার মধ্যে তেমন কিছু ছিল না। যখন আমার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে – তখন আমি তাকে বললাম তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমার বাবার সঙ্গে কথা বলো”।
“আমাদের দুই পরিবারে কারো কোন সমস্যা ছিল না। তাদের ব্যাপার ছিল তাদের ছেলে পছন্দ করেছে মেয়েকে আর আমার পরিবারের ব্যাপার ছিল আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি”।
তবে বন্ধুবান্ধব আর সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ টিপ্পনী কাটার চেষ্টা করেছেন। শামীমা ইয়াসমিন বলেন, সেই টিপ্পনীর জবাবও তিনি তাদেরকে টিপ্পনী কেটেই দিয়েছিলেন যার ফলে তারা আর কখনো এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি।
অনেক পরিবারে মেনে নেয় না
বাংলাদেশের সমাজের বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ে -ছেলের চেয়ে বয়সে ছোট হবে এটাকেই স্বাভাবিক প্রচলিত ধারা হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এর ব্যতিক্রম ঘটনাও হচ্ছে অনেক।
তবে সেক্ষেত্রে মেয়ে এবং ছেলের মধ্যে কোন সমস্যা না থাকলেও পরিবারের সদস্যের আপত্তি থাকে। তেমনি একজন সানজিদা ইসলাম, থাকেন ময়মনসিংহ শহরে।। তিনি বলেন ,তার বিয়ের কাবিনের সময় বরপক্ষ তার বয়স দেখার পর পরিস্থিতি এমন হয় যে বিয়েটাই ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
“আমার স্বামী কিন্তু জানতো যে আমি তার চেয়ে বড়। ঘটনা ঘটলো বিয়ের দিন। যখন কাবিনের সময় আমার বয়স দেখে বরপক্ষের লোকজন নারাজি দিল যে এই বিয়ে হবে না। কিন্তু আমার স্বামী অটল ছিল”।
সানজিদা ইসলাম বলেন, তারা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। তার স্বামী তার চেয়ে তিন বছরের ছোট, তবে তাদের নিজেদের বোঝাপড়ায় কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু তিনি বলছেন, বর্তমানে তার শ্বশুরবাড়ীতে এখন এমন একটা বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে তিনি এবং তার স্বামী উভয়েই আলাদা বাসা নিয়ে থাকার কথা চিন্তা করছেন।
“সেই যে বিয়ের দিন থেকে একটা সমস্যা তৈরি হলো – এখনো পর্যন্ত আমার নানারকম দোষ-ত্রুটি ধরতে থাকে। আমাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি তৈরি করে। এখন আমরা চিন্তা করছি যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এখান থেকে বের হয়ে আলাদা বাসা নিয়ে থাকবো। কারণ আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে কোন প্রকার সমস্যা নেই”।
কেন বড় বয়সের মেয়ে মেনে নিতে চায় না পরিবার
অনেকেই বলছেন, সংসার জীবনে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন তারা সমস্যায় পড়ছেন, তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চান নি।
একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার স্বামী তার চেয়ে বয়সে ছোট- এটা তার স্বামীর পরিবার প্রথম থেকেই মেনে নেয়নি। এখন তাদের একটি সন্তান আছে। এই সন্তানের দেখাশোনার কথা চিন্তা করেই তিনি এখনো যৌথ পরিবারে আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, মূলত তিন কারণে সমাজ বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সে ছোট পুরুষকে মেনে নিতে পারে না পরিবারগুলো। “এখানে প্রধান তিনটা বিষয় – অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যৌনতার নিয়ন্ত্রণ, আর নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণ”।
তিনি বলেন, “এর পাশাপাশি ‘বড়দের নিয়ন্ত্রণেই সব কিছু হবে’ এটাকেই একটা কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থাপনা হিসেবে দেখা হয়। এই মনস্তত্ব থেকে দেখা যায় – যে নারী তার চেয়ে বয়সে ছোট ছেলেদের বিয়ে করে, সেসব নারীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে সবসময় মনে করিয়ে দেয়া হয় যে সে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নেই। সুতরাং তাকে নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়”।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন একটা নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের সব দায়িত্ব নিজেই নিতে পারার ক্ষমতা রাখেন তখন বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ তার চেয়ে বয়সে বড় নাকি ছোট – সেটা বিবেচ্য বিষয় হয় না।
সে তখন ঐ পুরুষ এবং তার পরিবারের কাছে প্রাপ্য সম্মানটা চাই। সেটা যখন পায় না তখনি পরিবার গুলোর মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয় বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।