স্পোর্টস ডেস্ক : সংসদ সদস্য হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার আয় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমেছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের হলফনামায় মাশরাফি বার্ষিক আয় ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা উল্লেখ করেছিলেন। এবার আসন্ন নির্বাচনের জন্য দেওয়া হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৮ টাকা উল্লেখ করেছেন। পাঁচ বছরে তাঁর আয় কমেছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ টাকা। ফলে আয় হ্রাসের হার ৫৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই সময়ে তিনি নতুন কোনো সম্পদ গড়েননি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সম্পদের মূল্য কিছুটা বেশি দেখিয়েছেন।
হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে মাশরাফির কোনো ঋণ ছিল না। তবে এখন সিটি ব্যাংকে ৮৯ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা ঋণ আছে।
সাধারণত ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রতিনিধিদের আয় বাড়লেও মাশরাফি বিন মুর্তজার আয় কমেছে এবং স্থাবর সম্পদ যা ছিল, তাই আছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টিকে তাঁরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।
আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেকে পাওয়ারে যাওয়ার পর টাকা–পয়সায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। মূলত মাশরাফির কমেছে। এই ছেলেটা আমার দৃষ্টিতে একটা সৎ ছেলে। দৃশ্যমান কোনো অর্থ আত্মসাৎ করতে দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রতিটি সংসদ সদস্য যদি জনগণের মঙ্গল কামনা করে, তারা মাশরাফিকে অনুকরণ করতে পারে।’
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। খেলার মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠ সর্বত্র জনপ্রিয়তা ধরে রাখা মাশরাফির বার্ষিক আয় ও গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ কমেছে। স্থাবর সম্পত্তি, ব্যবহৃত গাড়ি ও আসবাবপত্র যা ছিল, তাই আছে।
উল্লেখ্য, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ও নড়াইল সদরের একাংশ নিয়ে নড়াইল–২ আসন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাশরাফি বিন মুর্তজা, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান, জাতীয় পার্টির খন্দকার ফায়েকুজ্জামান, এনপিপির মো. মনিরুল ইসলাম, গণফ্রন্টের মো. লতিফুর রহমান, জাকের পার্টির মো. মিজানুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মাহবুবুর রহমান মোট ৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৯ জন।
হলফনামায় উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, মাশরাফির শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত হতে আয় ১৪ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ টাকা। চাকরি (সম্মানী ও ভাতা) ২৩ লাখ ৩ হাজার ২০ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আয় ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৫ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ নেই। তবে ৫০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
২০১৮ সালে দেখানো অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৫১ টাকা গচ্ছিত ছিল। এবার সেখানে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোম্পানির শেয়ার, সঞ্চয়পত্রসহ স্থায়ী আমনতে বিনিয়োগ ৫ কোটি ৩২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩১ টাকা দেখানো হয়েছে। সিটি ব্যাংক থেকে ঋণ (গৃহঋণ) নিয়েছেন ৮৯ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা।
২০১৮ সালের মতো এবারও নির্বাচনী হলফনামায় একটি প্রাইভেটকার, দুটি মাইক্রোবাস, একটি জিপ গাড়ি দেখানো হয়েছে (মূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার টাকা)। বাড়ির আসবাবপত্র ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া স্থাবর সম্পত্তি একই দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ‘মাশরাফি একজন সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। তাঁর মনোনয়নপত্রের রিটার্ন দেখে বুঝতে পারছেন তিনি কতটা সৎ। সে যে হিসাবটা দিছে, সেটা সঠিক। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে নিজের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করার যে ভূমিকা, তাঁর মধ্য সেটা নাই।’
স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল কবীর টুকু বলেন, ‘আমার কাছে মাশরাফিকে ভিন্ন লেগেছে। নড়াইল–২ আসনের সংসদ সদস্য তাঁর আয় আরও কমে গেছে। যেহেতু তিনি ক্রিকেটার ছিলেন, তাঁর মূল বেতন আসত ক্রিকেট থেকে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, তাঁর স্থাবর সম্পত্তি আগেও যা ছিল, এখনো তাই আছে। নড়াইল–২ আসন ভাগ্যবান, আমাদের সংসদ সদস্যের নিজের জন্য অর্থ উপার্জনের সেরকম কোনো চিন্তা–ভাবনা নেই।’
একই মত দিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু। তিনি বলেন, ‘একই প্রার্থী পুনরায় নির্বাচন করলে হলফনামায় দেখা যায় প্রার্থীর যে উন্নয়ন হয় বা সম্পদ বাড়ে, তা মাশরাফির ক্ষেত্রে না বাড়ার সম্ভাবনা বেশি এবং বাড়েনি বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ মাশরাফি নিজেকে সৎ রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতকে শক্তিশালী করছে।’ সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।