সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ শহরে অবস্থিত সিটি হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজার অপারেশন করাতে এসে প্রাণ হারালেন রানু বেগম (৩৫) নামের এক প্রসূতি। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে সন্তান জন্ম দেয়ার ১ ঘণ্টার মাথায় মারা যান তিনি।
নিহত রানু বেগম মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের কামারদিয়া এলাকার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী। সদ্যভুমিষ্ট সন্তান ছাড়াও তার ১৪ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত রানু বেগমের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বাচ্চা নেয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে রানু বেগমের হার্টের সমস্যা ছিল। চিকিৎসকরা তাকে আর বাচ্চা নিতে নিষেধ করেছিল। কিন্ত হঠাৎ করে তিনি গর্ভধারণ করেন এবং পরবর্তীতে বাচ্চা প্রসবের সময় হলে মানিকগঞ্জ সিটি হসপিটালে অপারেশন করাতে যান। এসময় সেখানকার ডাক্তাররা তাকে তড়িঘরি করে অপারেশন করেন।
জানা গেছে, রানু বেগমের অপারেশনের আগে কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তার অপারেশন করেন ডা. এমদাদুল হক (সার্জন) ও ডা. মাহমুদুল হাসান মুজাহিদ (এ্যানেসথেশিয়া)। এরপর ওই প্রসূতির অক্সিজেন লেভেল ডাউন হয়ে গেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্ত রানু বেগমের শারিরীক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সদর হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে একাধিক চিকিৎসক জানান, কোন রোগীর হার্টের সমস্যা থাকলে একজন কার্ডিওলজিস্ট এর তত্বাবধানে রেখে অপারেশন করা উচিৎ। কারণ অপারেশনের সময় হার্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সেসময় একজন কার্ডিওলজিস্ট সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেন। কারো হার্টের সমস্যা থাকলে সাধারণ সার্জনরা সেই রোগীর অপারেশন করলে রোগীর মৃত্যুর ঝুকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া যে হাসপাতালে অপারেশন করা হবে সেখানে সমস্যা বেড়ে গেলে যাতে তাৎক্ষণিক মেডিকেল সাপোর্ট দেয়া যায় সেই ব্যবস্থাও থাকাও জরুরী।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দোলোয়ার হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে রানু বেগমের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনের আগে রোগীর শারিরীক অস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো না হলেও একমাস আগের রিপোর্ট ছিল। সেগুলো দেখেই ডা. এমদাদুল হক ও ডা. মাহমুদুল হাসান মুজাহিদ তার অপারেশন করেছেন। অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে ডা. মাহমুদুল হাসান মুজাহিদ বলেন, অপারেশন সেটে রোগীটার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পরে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। রোগীর অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি কারণে রোগীর অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে এই মুহুর্তে সেটা বলা যাচ্ছেনা। প্রত্যেকটা রোগীরই অপারেশনের পর অক্সিজেন লেভেল কমে যেতে পারে।
অপরদিকে, ডা. এমদাদুল হক বলেন, অপারেশনে মাঝপথে রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পরে এ্যানেসথেশিয়া টিউব পড়িয়ে অন্যত্র রেফার্ড করেছে। এ্যানেসথেশিয়া ডাক্তার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। আমার কাজ আমি কমপ্লিট করে দিয়ে চলে এসেছি। পরে ওরা রিভার্স করেছে, টিউব ঢুকিয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছে। আমি পরে শুনেছি যে, রোগী ঢাকা যায়নি, সদরে গিয়েছে। সদরে যাওয়ার পর নাকি মারা গেছে। তখন তো আফসোস করা ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না। এখানে আমার কোন সমস্যা নেই, কারণ আমি আমার অপারেশন হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাকসেফুলি কমপ্লিট করেছি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ডা. এমদাদুল হকের হাতে অপারেশনের পর মানিকগঞ্জে একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এবং একাধিক রোগীর পেটে মপ (গজ) রেখে সেলাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে লিখিত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর জানানো হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে ডা. এমদাদুল হকের অপারেশন করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।