জুমবাংলা ডেস্ক : শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের দিগন্ত জোড়া সরিষার মাঠ। এ বছর এই জেলায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ব্যাপকহারে সরিষার আবাদ করেছেন চাষিরা। ফলে সবুজ গাছের হলুদ ফুলগুলো শীতের রোদে যেন হাসছে।
চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হতে পারে বলে ধারণা করছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সরিষা চাষ করেছিলেন। সে সময় লাভ বেশি হওয়ায় এ মৌসুমে সরিষা চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে।
এদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়াতে ও মাঠ থেকে মধু সংগ্রহে জমিতে মৌ-বক্স বসানো হয়েছে। এ বছর জেলায় মধু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫০ মেট্রিকটন। এখন পযন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে ৮০ মেট্রেকটন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। সর্বনিম্ন চৌহালী উপজেলা ২৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮২০ হেক্টর, কাজীপুরে ১ হাজার ২২৫ হেক্টর, রায়গঞ্জে ৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর, তাড়াশে ৬ হাজার ২০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর, বেলকুচিতে ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর, কামারখন্দে ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
এই মৌসুমে টরি-৭, বারি-১৪, বীনা-৯, বীনা-১৪ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবার ইউরিক অ্যাসিড মুক্ত ক্যলানীয়া জাতের সরিষা চাষ হয়েছে অনেক জায়গায়। যা চাষ করতে সময় লাগে ৮৫ থেকে ৯০ দিন। যেখানে অন্যান্য জাতের সরিষা চাষাবাদে সময় লাগে প্রায় ১২০ দিনের মতো। কৃষকেরা এ জাতের সরিষা চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি আয় করতে পারবেন। এই সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
এছাড়া সরিষা চাষের প্রণোদনা হিসাবে জেলার ৩৫ হাজার ২০০ জন কৃষকদের মধ্যে বিঘা প্রতি ১ কেজি বিজ, ২০ কেজি ডিএসপি এবং ১ কেজি এমওপি সার দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াগাতী গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে আমি সরিষা আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৪-৫ মণ সরিষা পাবো বলো আশা করছি।’
উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া গ্রামের কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছি। ফলন ভালো হওয়ায় ২৫-২৬ মণ সরিষা পাওয়ার আশা করছি। কাটা ও মাড়াই করা দিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে আয় হবে ৯০ হাজার টাকার বেশি।’
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়ামিন সুমী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের মধ্যে সিরাজগঞ্জে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় সরিষার আবাদ সর্বোচ্চ। আমরা সরিষা আবাদ সম্পসারণে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা এবং বিভিন্ন প্রদশর্নী স্থাপনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছি। যেহেতু ভোজ্য তেলের উপর আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এই জন্য আমরা সরিষার আবাদ যাতে বেশি হয়, তার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি।‘
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৩ বছরে ভোজ্য তেল উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। সেই হিসাবে এই জেলায় গত বছরের চাইতে ৮ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়াও সরিষার ফলন যেনো আরো ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায় সেই কারণে সরিষার জমিতে মৌ-বক্স বসানো হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সরিষার ফলন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরিষার জমি থেকে আমরা খাটি মধু উৎপাদন করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর জেলায় মধু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫০ মেট্রিকটন। এখন পযন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে ৮০ মেট্রেকটন। আশা করছি বাকি সময়ের মধ্যে আমাদের মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।