চিকিৎসকেরা প্রথাগত ভাবে যে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন, তার আবিষ্কার প্রায় ২০০ বছর আগে। বহুলব্যবহৃত এই যন্ত্রের সাহায্যে হৃদ্যন্ত্রের শব্দ শোনেন চিকিৎসকরা। হৃদ্যন্ত্রের বিভিন্ন কপাটিকা বন্ধের শব্দের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনের শব্দও শোনা যায় এতে। সেই শব্দ শুনেই চিকিৎসক বুঝতে পারেন, হার্টের অবস্থা কেমন। তার কলকব্জা ঠিকঠাক চলছে কি না। প্রযুক্তির কল্যাণে স্টেথোস্কোপের এখন নানা ধরনও চলে এসেছে। ব্লু-টুথ স্টেথোস্কোপে কান পেতে নিমেষের মধ্যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসেও চিকিৎসক শুনতে পারবেন আপনার হৃৎস্পন্দন। তবে তাতে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ধরা পড়বে না সহজে। সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে স্টেথোস্কোপের সঙ্গে সংযুক্তি ঘটানো হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। দুইয়ের মিশেলে যে স্টেথোস্কোপ তৈরি হয়েছে, তা হার্টের অবস্থা বুঝে ফেলবে মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই।
ব্রিটেনের ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ হেল্থকেয়ার এনএইচএস-এর গবেষকেরা এআই পরিচালিত বিশেষ এক রকমের স্টেথোস্কোপ বানিয়েছেন। এই স্টেথোস্কোপে কান রাখলে মিনিট পনেরোর মধ্যে ধরা যাবে, হার্টের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে কি না, হার্টের ভাল্ভে কোনও গোলমাল আছে কি না। এমনকি হার্টে রক্ত সঞ্চালন সঠিক নিয়মে হচ্ছে কি না, তা-ও ধরা পড়বে খুব কম সময়ের মধ্যেই। অতএব এর সুবিধা হল, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হয়ে যেতে পারবেন রোগী।
সাধারণত এক জন মানুষের হৃৎস্পন্দন মিনিটে ৬০-১০০র মধ্যে থাকে এবং হৃৎস্পন্দনের একটা নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে। সেটা কম-বেশি হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ বলা হয়।
এ ক্ষেত্রে দুটো জিনিসে সমস্যা দেখা যায়— রক্তনালিতে ব্লক, যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে এবং হার্টরেট কমে যাওয়ার ফলে যে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হয়, সে ক্ষেত্রে হার্টবিট ৬০-এর নীচে নেমে যায়। তখন শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
হার্টের ভিতরে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস গেলে তবে হার্ট সঙ্কুচিত হয়। এই ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস যেখানে তৈরি হয়, সেই জায়গার যদি গন্ডগোল থাকে, তা হলে হার্টরেট কমে যেতে পারে। যত ক্ষণ পর্যন্ত কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তত ক্ষণ এই সমস্যা ধরা পড়ে না।
বুক ধড়ফড় করা, শরীর কাঁপা, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা দিলে তা হার্টের রোগ কি না, বুঝতে পারেন না অনেকেই। সে কারণে ইসিজি বা হার্টের অন্যান্য পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এআই স্টেথোস্কোপ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছোটখাটো ইসিজি করে তার রিপোর্ট বলে দিতে পারবে। সে থেকেই চিকিৎসকেরা বুঝে যাবেন, রোগীর হার্টে কী সমস্যা হয়েছে।
মাদ্রিদে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিয়োলজি-র বার্ষিক সম্মেলনে স্টেথোস্কোপটির কার্যকারিতা প্রদর্শন করা হয়েছে। ব্রিটেনের কম করেও ২০০টি ক্লিনিকে প্রায় ১২ হাজার রোগীর উপর পরীক্ষা করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের। অনুমোদন পেলেই সেটির সার্বিক ব্যবহার শুরু হবে বলেও জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।