বিনোদন ডেস্ক : ‘এভাবে অভাবে কাঁদতে হবে কোনোদিন ভাবিনি। চাল থাকে তো নুন থাকে না অবস্থা। এভাবেই জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটবে বুঝতে পারছি না। তারপরও এই আশ্রয়ণের লোকদের কাপড় সেলাই করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। কখনো দুঃখ কি এটা বুঝতে পারিনি। এমন সময় জীবনে অভাব-অনটন এসে চাপবে এটা বুঝতে পারিনি। আমি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, সবাই আমাকে চেনে, যে কারণে ভিক্ষা করার কথাও চিন্তা করতে পারি না।’ এ কথাগুলো বলছিলেন এক সময়ের আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বনশ্রী।
১৯৯৬ সালে ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমার মধ্যদিয়ে বড় পর্দায় পা রাখেন তিনি। এতে তার নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর ‘নেশা’, ‘মহাভূমিকম্প’, ‘প্রেম বিসর্জন’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’-সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। অভিনয় ক্যারিয়ারে এই নায়িকা কাজ করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, আমিন খান, অমিত হাসানসহ অনেকের সাথেই।
বনশ্রীর পুরো নাম সাহিনা সিকদার। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মজনু শিকদার ওরফে মজিবুর রহমান শিকদার ও মাতা সবুরজানের (রিনা) দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রীই বড়। বাবা ঠিকাদারি করার কারণে সাত বছর বয়সেই শিবচর থেকে পাড়ি জমান ঢাকাতে।
নগরীতে এসে নাম লেখান সিনেমায়, জনপ্রিয়তাও পান। তবে সুখের সময়টা খুব বেশিদিনের ছিল না। একটা সময় সিনেমা থেকে সরে যান।
বনশ্রী জানান, সিনেমা ছেড়ে দেয়ার পর আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন ঢাকার শাহবাগের ফুল মার্কেটে ফুলের ব্যবসা করেছেন। বিভিন্ন বাসে করেছেন হকারি, বিক্রি করেছেন নামাজ শিক্ষার বইও। অভাব অনটনের মধ্যে জীবনের ঘানি টানতে না পেরে করোনা মহামারির পরে চলে আসেন নিজ উপজেলা শিবচরে। বর্তমানে বসবাস করছেন শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৯ নম্বর ঘরে।
বনশ্রীর দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন ২০ লাখ টাকা। এতেও অভাব ঘোচেনি বনশ্রীর। স্থায়ী ঘর না থাকায় স্বস্তিতে ছিলেন না। সবশেষে ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
বনশ্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা আমি ব্যাংকে রেখেছি। আর সেই টাকার লাভের অংশ দিয়েই আমি চলি। আগে ২১ হাজার ৪০০ টাকা লাভ পেতাম। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতাম। পরে আনুমানিক ৪ বছর হবে সেই লাভের টাকা থেকে ৪ হাজার ২০ টাকা ব্যাংক কেটে নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ১৭ হাজার ২০০ টাকার মতো ওখান থেকে লাভ পাই। সেই টাকা দিয়ে নিজের ওষুধ, সংসার ও ছেলের লেখাপড়াটা কোনোমতে চলছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি এখন আর নায়িকা নেই। আমার মেয়ে হারিয়ে গেছে। সে কোথায় আছে, জানি না। শেখ হাসিনার দয়ায় বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
বনশ্রী জানান, তার দুই ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়েটি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন কিডন্যাপ হয়েছিল। এরপর মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে একেবারে বৃদ্ধের মতো হয়ে পড়েন। তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সঙ্গীতার মালিক সেলিম খান তাকে মডেল বানিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফেরত দেয়নি। মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য থানা-পুলিশের আশ্রয় নিয়েও ফেরত পাননি। আমার মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না। এখন কষ্ট করেই দিন যাচ্ছে।
বনশ্রী জানান, এক সময় বিটিভিতে আবৃত্তি করতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলেন। উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় শেখেন সুবচন নাট্য সংসদে। অভিনয় শেখা থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের টান তৈরি হয়। এরপর সুযোগ আসে। অভিনয় করেন সোহরাব-রুস্তম সিনেমায়। তখনকার হিট নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ছিলেন তার নায়ক!
৯০ দশকের এই চিত্রনায়িকা এখন চান জীবন-জীবিকা চালানোর মতো কোনো আয়ের উৎস। সেলাইয়ের কাজ জানেন তিনি। এই প্রতিভাকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে চান। মেয়েদের পোশাক তৈরি ও বিক্রির ব্যবসায় করতে চান তিনি। কিন্তু যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরণই দায় সেখানে এই ব্যবসা দেয়া স্বপ্ন হয়েই আছে।
বনশ্রী বলেন, সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমি ব্যবসাটি দাঁড় করাতে পারতাম। এখানে আরো মেয়েরা সেলাইয়ের কাজ করতে পারত। পোশাক তৈরির কাজ করতাম।
এছাড়াও তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের মাননীয় চীফ হুইপ জনাব নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি মহোদয় আমাকে কোনো একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে ভালোভাবে থাকতে পারতাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।