জুমবাংলা ডেস্ক : দেখতে দেখতে শেষ হতে চললো পবিত্র রমজান মাস। আর দুদিন পরেই ঈদ। কিন্তু ঈদের আমেজ নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরার পরিবারে। কেননা ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় তিনি আছেন কারাগারে। আর মেয়েকে ছাড়া ঈদ করতে হবে ভেবে কেঁদে কেঁদে দিশেহারা তার মা।
খাদিজাতুল কুবরার মা ফাতেমার হৃদয় চৌচির। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, মেয়েকে ছাড়া এটা আমার প্রথম ঈদ। আমার মেয়ে নিজে থেকে কিছু করেনি। রাজনীতিও বুঝে না। কিছু না বুঝেই মেয়েটা আমার জেল খাটতাছে। মেয়েটা এভাবে তিলে তিলে শেষ হইতে পারে না। আমার মেয়ের পড়াশোনার দিকে খেয়াল ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দুই মাস পরেই এ ঘটনা ঘটল। আমার সন্তানের জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না বলে বিলাপ করেন ফাতেমা বেগম।
প্রবাসী বাবার সন্তান খাদিজাতুল কুবরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় আট মাস কারাগারে আছেন। তিনি জবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
তার বিরুদ্ধে অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে রয়েছে।
জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় আলাদা দুটি মামলা করে পুলিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করা দুটি মামলার এজাহারের অভিযোগ এবং বর্ণনা প্রায় একই। তবে সরকারবিরোধী এসব বক্তব্য খাদিজার নিজের নয় বলে দাবি তার পরিবারের।
একটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। দুই বাদীই দায়িত্ব পালনকালে মোবাইল ফোনে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে খাদিজাতুল কুবরা ও দেলোয়ার হোসেনের ভিডিও দেখে দু’জনই নিজ নিজ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।
তবে খাদিজার জাতীয় পরিচয়পত্র ও একাডেমিক ডকুমেন্টে বয়স ১৭ বছর। কিন্তু তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পুলিশ মামলা দুটি করে। এর দুই বছর পর মামলার অভিযোগপত্র তৈরি হলে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
একাধিকবার নিম্ন আদালতে খাদিজার জামিনের আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর হয়। ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি তা স্থগিত করেন।
খাদিজার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জবির ওই ছাত্রীর জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে চেম্বার বিচারপতি ওই আদেশ স্থগিত করেন। এ নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে মে মাসে। তিনি বলেন, খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা হওয়াই উচিত নয়। কারণ যখন মামলা হয়েছে দেশের আইন মোতাবেক সে শিশু।
এর আগে খাদিজার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছিল তার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু আট মাসেও তার মুক্তি মেলেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।