জুমবাংলা ডেস্ক : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাতের মতো বিনোদন অঙ্গনেও এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই অবস্থা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশজুড়ে। যেমন—শিল্পকলায় প্রদর্শনীরত অবস্থায় নাটক বন্ধ করে দেওয়া, চট্টগ্রামে একটি শো-রুম উদ্বোধন করতে গিয়ে ‘তৌহিদী জনতা’র তোপের মুখে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর ফিরে আসা, কিংবা অতি সম্প্রতি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে চিত্রনায়িকা পরী মণির অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা। এমন কিছু ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারকারা। এবার সেসব বিষয়ে বলতে গিয়ে ‘আমরা কালচারাল সবাইকে ধারণ করি’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ শো-তে এই কথা বলেন তিনি। সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন তাঁর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, ‘‘সরকারের ১০০ দিনের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আপনি সাংস্কৃতিক জাগরণের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শনীরত অবস্থায় একটি নাটক বন্ধ হতে দেখেছি, একজন সফল চলচ্চিত্র পরিচালককে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, তার জন্য আপনারা ঘরে-বাইরে কথা শুনছেন; আরও যদি আমরা বলি, কোনো একটি ব্র্যান্ডিংয়ের অনুষ্ঠানে গেলে মেহজাবীনকে শো-রুম উদ্বোধন করতে দেয়নি ‘তৌহিদী জনতা’, পরী মণিকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানের মুখে শো-রুম উদ্বোধন না করে চলে যেতে হয়েছে—এগুলো আপনারা কীভাবে দেখেন?’’
এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতিকে কীভাবে দেখি—শিল্পকলা একাডেমির ডিজি (মহাপরিচালক) যিনি হয়েছেন, তাঁর নিয়োগেই বুঝবেন। সৈয়দ জামিল আহমেদের চেয়ে মেধাবী থিয়েটার ডিরেক্টর বাংলাদেশে নাই, তাঁর সর্বজনগ্রাহ্যতা আছে। আর যে ঘটনা হয়েছে, সেটা নিয়ে তো আমরা ইতিমধ্যে বলেছি। আমরা বিবৃতি দিয়েছি। এবং জামিল ভাই খুবই ব্রিলিয়ান্টলি এটা হ্যান্ডেল করেছেন।’
যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কালচারাল সবাইকে ধারণ করি। আমরা চাই বাংলাদেশের নাটক আরও উত্তরোত্তর উচ্চপর্যায়ে যাক। বাংলাদেশের সিনেমা জগতে আরও ব্রিলিয়ান্ট সিনেমা হোক। আমাদের এখান থেকে যেন অস্কার পায়। আর যিনি (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) এসেছেন, তাঁর বিষয়ে দু-একজন মন্তব্য করেছেন; এটা হতেই পারে। কেউ কেউ তাকে পছন্দ না-ও করতে পারেন। কিন্তু মোস্তফা সরয়ার ফারুকী একজন ব্রিলিয়ান্ট ফিল্ম মেকার। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি খুব ভালোভাবে বুঝেন।’
এক পর্যায়ে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চান যে, ‘আজ থেকে পাঁচ বছর পরে সাংবাদিকতার কোনো ছাত্র যখন সংবাদপত্রে কোনো শিরোনাম দেখতে গিয়ে দেখবে—শিল্পকলায় একটি নাটক প্রদর্শিত হওয়া অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডিজি (পরিচালক) মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আর নাটক চলবে না।’ মানে এর কাছাকাছি জিনিস তো আমরা ১৯৭০ সালে উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’, ওই নাটকের সময়েও দেখিনি। ইংরেজরা নাটক বন্ধ করার জন্য হুমকি দিয়েছিল, তার জন্য জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রদর্শনীরত অবস্থায় নাটক বন্ধ করতে শুনিনি। মানে নাটক কী রকম সরকারের সময়ে বন্ধ হয়?’
জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘নাটক প্রদর্শনীরত অবস্থায় বন্ধ করা হয়েছে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। এবং যারা এই বিক্ষোভ করেছিল তাদেরকে তো আমরা নিন্দা জানিয়েছি। কারও বা ব্যক্তির ওপর যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনার অভিযোগ পুলিশে দেন, এভাবে ব্যাঘাত ঘটাতে তো পারেন না। প্রেস কনফারেন্সে বলেন, এই লোকগুলো এই এই কাজ করেছে। আপনি এসে নাটকে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবেন কেন? জামিল ভাই এটাকে যেভাবে সমাধানে এনেছেন—ফ্যান্টাস্টিক! আমি মনে করি তিনি খুব বিচক্ষণতার সহিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাঁচ বছর পর দেখা যাবে, একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ হয়েছে। সবাই খুব ভালো ভালো কাজ করছে, ব্রিলিয়ান্ট নাটক হচ্ছে, ব্রিলিয়ান্ট সিনেমা হচ্ছে। সাংস্কৃতিগতভাবে বাংলাদেশ খুবই ভালো একটা জায়গা। আমি মনে করি, সামনে আরও ভালো জায়গায় যাবে।’
তারপরই বিশেষভাবে মেহজাবীনের ঘটনাটি উল্লেখ করেন খালেদ মুহিউদ্দীন। এর উত্তরে শফিকুল আলমের ভাষ্য, ‘দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়েই কি আপনি সমগ্রটার বিচার করছেন? এটাকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ব্লিপ বলে।’
‘তাহলে পাঁচটা শো-রুম উদ্বোধন করতে গেছে, দুটিতে বাধা পড়ছে, তার মানে ৪০ শতাংশ বাধা পড়ছে; ব্যাপারটা কি এ রকম’—জানতে চান খালেদ মুহিউদ্দীন।
শফিকুল আলম বললেন, ‘আপনি দেখেন, আমরা তো বলছিই! আর আমরা কোনো ইসলামিস্ট বা কোনো গ্রুপকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আমরা এসেছি একটা মহৎ দায়িত্ব পালনে, রাষ্ট্র বিনির্মাণে; যে গণঅভ্যুত্থান হলো সেই স্পিরিটকে (আত্মশক্তি) ধারণ করে।’
দুর্দান্ত ফিচারের সঙ্গে ভিভোর এই ফোনে পাবেন স্যাটেলাইট কানেকশন, কল করা যাবে সিম ছাড়াও
প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে নিরাপত্তাহীনতায় শো-রুম উদ্বোধনে অংশ নিতে পারেননি জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। একই দিন শিল্পকলা একাডেমিতে বিক্ষুব্ধ জনতার চাপে নাট্যদল দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’র মঞ্চায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন মহাপিরচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন নাট্যদলটির সচিব এহসানুল আজিজ বাবু। এ ছাড়া সম্প্রতি একটি শো-রুমের উদ্বোধনে গেলে তোপের মুখে পড়েন চিত্রনায়িকা পরী মণি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।