জুমবাংলা ডেস্ক : শীতকালীন সবজি এখন চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালে। বিশেষ করে বাঁধাকপি ও ফুলকপি এখন মিলছে মেহেরপুরে। জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে কৃষকেরা এখন ব্যস্ত গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে। সবজি চাষের প্রতিকুল আবহাওয়া থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভালো। দাম ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসরণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলা এবার প্রায় দেড়শ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, গাড়াডোব, গাড়াবাড়িয়া, সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া, শিবপুর, সুভরাজপুর ষৌলমারি গ্রামের বিভিন্ন মাঠে কপির পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউবা ব্যস্ত নতুন করে ফুল ও পাতাকপির চারা দিতে।
গ্রীষ্মের এ সময়ে চাষিরা সাধারণত পাতাকপি ট্রপিক্যাল কুইক, সুপার সান, নামধারী এন.এস ফরটি থ্রি ও ফুলকপির সামার হোয়াইট, মুক্তি, লিডার জাতের কপির আবাদ করে থাকে কৃষকেরা। এ সময়ে এসব ফসল আবাদে খরচ বেড়ে যায়। কারণ অসময়ে কপি উৎপাদন করতে প্রচুর সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। পাশাপাশি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ফসল আবাদে বেড়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ। ফলে চলতি মৌসুমে কপি আবাদে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপরও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন হয়েছে ভালো।
মেহেরপুর শহরের শেখপাড়ার কৃষক পুলক বলেন, আমি এবার শেখপাড়ার একটি মাঠে ১৮ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছি। জমি থেকেই ব্যবসায়ীরা কপি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে খরচ বাড়ায় লাভের অঙ্কটা কিছুটা কমেছে। হঠাৎ করে দাম কমে গেলে লোকসানে পড়তে হয় চাষিদের। ফলে এ সময়ে সবজির আবাদ করে অনেক সময় ঝুঁকিতে পড়তে হয় চাষিদের।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, অসময়ে কপির আবাদ করতে গেলে সবচাইতে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অতিবৃষ্টির কারণে। তাছাড়া পোকার আক্রমণ বেশি থাকে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেশি করতে হয়।
ফলে শীতকালে যে কপি আবাদ করতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়, সেই কপি গ্রীষ্মকালে আবাদ করতে গেলে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আমি এবার তিন বিঘা জমিতে ফুল কপির আবাদ করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে বাজার দর ভালো থাকায় লাভবান হয়েছি। এক বিঘা জমিতে কপি আবাদে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে এক বিঘা জমির কপি বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকায়।
সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক সেলিম জানান, চলতি মৌসুমে আমি দুই বিঘা জমিতে পাতাকপির আবাদ করেছি। যদিও তেল, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাড়ায় এবার আবাদে দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। তারপরও ফলন হয়েছে ভালো। দুই বিঘা জমির কপি এখন বিক্রির উপযোগী। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা জমিতে আসছেন। আশাকরি জমি থেকেই কপি বিক্রি হয়ে যাবে।
আমি দুই বিঘা জমির কপির দাম বলেছি ২ লাখ ৪০ হাজার টকা। ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দাম বলেছে। তবে আর কিছুদিন অপেক্ষা করে দুই লাখ টাকা দাম হলে আমি কপিগুলো বিক্রি করে দেব। আশাকরি মোটা অঙ্কের লাভ আমি ঘরে তুলতে পারবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) এ.কে.এম কামরুজ্জামান বলেন, অসময়ে পাতাকপি ও ফুলকপি আবাদ করা একটু কঠিন। কারণ এ সময়ে কৃষকদের অতিরিক্ত সজাগ থাকতে হয়। তারপরও আমরা কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিশেষ করে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে কিভাবে গ্রীষ্মকালে শীতকালীন নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায়। কৃষকরা এখন অনেক সতর্ক। তারাও চেষ্টা করেন অসময়ে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।