জুমবাংলা ডেস্ক : ফরিদপুরের মধুখালী ও ভাঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল প্রতারক চক্রের ‘সদরদপ্তর’ হিসেবে পরিচিত। এই দুই জনপদে ভুয়া কলসেন্টার খুলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনেক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতারণা করে দিনের পর দিন কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়, সেই প্রযুক্তি জ্ঞানও রয়েছে প্রতারকদের। এই প্রতারক চক্রের হোতা হলেন মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন। সেখানে প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় এখন পলাতক তিনি। প্রযুক্তি জ্ঞান থাকায় তাঁকে পাকড়াও করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। একই মামলায় পলাতক রয়েছেন ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস।
আসাদুজ্জামান ও অজিতকে ধরতে এরই মধ্যে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, অজিত চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। দু’জনের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে বিমানবন্দর এবং সীমান্তে সতর্কতা জারি হলে সীমান্তের একটি চক্রের সহায়তায় দেশ ছাড়তে সক্ষম হন অজিত। যারা তাঁকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা।
গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকায় কালীমন্দিরে আগুনের ঘটনায় সাত নির্মাণ শ্রমিককে আটক করে এলাকার লোকজন। তাদের তিনজন কৌশলে পালিয়ে গেলে বাকি চারজনকে বেদম পেটানো হয়। এতে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দু্ই ভাই মারা যান। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৭ জনকে, যাদের মধ্যে ৬-৭ জন সরাসরি হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন– উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস, বিনয় সাহা, অমৃত কুমার বসু, মৃত্যুঞ্জয় কুমার সরকার ও সুকান্ত মণ্ডল। আর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন আরও চারজন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতিমায় আগুনের ঘটনায় পঞ্চপল্লী ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের দোষারোপ করে মারধর করেন। ওই শ্রমিকরা পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ করছিলেন। পুলিশের তদন্ত ও জবানবন্দিতে উঠে আসে– বেলচা, লোহার রড, স্টিলের পাইপ, বাঁশের লাঠি দিয়ে দুই ভাইকে মারধর করা হয়। উত্তেজিত লোকজন স্কুলেও ভাঙচুর চালায়। তারা একটি নছিমনে আগুন দেয়। শ্রমিকদের ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, হলুদ, খয়েরি ও নীল টি-শার্ট পরা তিন তরুণ শ্রমিকদের বেশি নির্যাতন করে।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধোঁকা দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। হামলা ঠেকাতে তিনি নানা ভূমিকা রেখেছেন বলে দাবি করেন। তবে পরদিন হামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর গা-ঢাকা দেন তিনি। আর ঘটনার পরপরই এলাকা ছাড়েন মেম্বার অজিত। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়, সুকান্ত মণ্ডল, প্রভাষ কুমার, উজ্জ্বল, সুফল, সুকুমার, রাজকুমার, সাধন, বিকাশ, সুজিত, মানিকসহ কয়েকজন মারধরে অংশ নেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের পিঠমোড়া করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও মেম্বার অজিত কুমার তখন সেখানে ছিলেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেন, পলাতক অজিত কয়েকবার অবস্থান বদল করেছেন। নড়াইল ও রাজধানীর ভাটারাসহ কয়েকটি এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মোবাইল ফোন বা এ ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ছাড়াই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারে একাধিক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু ধরা যায়নি।
এদিকে, পুলিশ বলছে, কীভাবে প্রতিমায় আগুনের সূত্রপাত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততারও প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি। সন্দেহ থেকে তাদের পেটানো হয়েছে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার তদন্ত চলছে। যারা ঘটনায় জড়িত তারা কেউ ছাড় পাবেন না।’ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে এবং মেম্বারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।