আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভালবাসার কোনো স্থান নেই। যেকোনো জায়গায় যেকোনো স্থানে যেকোনো কেউ তার ভালবাসার মানুষটিকে পেতে পারে। বিষয়টি প্রমাণিত হলো আবারো। এর আগে ভারতের চেন্নাইয়ের মানসিক হাসপাতালের ২২৮ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। ছোট ছোট ঘরগুলোর ভিতরে হয় চাপা থাকে দুঃখের স্তব্ধতা, নয়তো চিৎকার, আঘাত, যন্ত্রণা।
প্রেম-ভালবাসা এবং তার থেকে বিয়ে এই প্রথম। সম্প্রতি হাসপাতালের দুই রোগী ৩৬ বছরের দীপা আর ৪২ এর মহেন্দ্রনকে প্রায়ই দেখা যেত মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডের ফাঁকা করিডোরে দাঁড়িয়ে গল্প করতে, কখনও বা রোগীদের জন্য তৈরি ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণে আলাপ জমাতেন দু’জনে, দেখা হলেই হেসে গল্প জুড়তেন— এমন ঘটনা অদ্ভুতই লেগেছিল হাসাপাতালের কর্মীদের। দু’জনের নামেই নালিশ গিয়েছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের ‘দূরে রাখতে’ কম চেষ্টা হয়নি।
আগামীকাল শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সেই দু’জনই পাশাপাশি বসবেন বর-কনে হয়ে। হাসপাতালের লাগোয়া মন্দিরে তাদের বিয়েতে সাক্ষী থাকতে সানন্দে রাজি হয়েছেন তারা, যারা এক দিন এই মন বিনিময়ে বাদ সেধেছিলেন।বছর দুয়েক আগে মনের অসুখ সারাতে চেন্নাইয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ হাসপাতালে এসেছিলেন দীপা এবং মহেন্দ্রন।
তারা ভাবতে পারেননি, মনের চিকিৎসা করাতে এসে তারা মনের সঙ্গীও খুঁজে পাবেন।দীপা বলেছেন, ‘‘মহেন্দ্রন যখন আমাকে বিয়ের কথা বলেছিলেন, আমি নিশ্চিত ছিলাম না। উত্তরও দিইনি। ওর প্রস্তাব শোনার পরও বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর আবার হাসপাতালেই ফিরতে হল। আমি বুঝতে পারছিলাম, জীবনটা যদি অর্থবহ হয় তবে এই মানুষটার জন্যই হতে পারে। না হলে নয়।’’
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে দীপা যখন এ কথা বলছেন, তখন তার পাশে দাঁড়িয়ে গুনগুনিয়ে এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যমের গান গাইছেন মহেন্দ্রন। গান শেষ হলে বললেন, ‘‘আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি। কিন্তু তোমাকে মনে রাখতে হবে, আমি যদি রেগে যাই বা কখনও বকাবকি করি, তা হলে সেটা তোমার ভালোর জন্যই করছি।’’
সম্ভবত বিয়ের পরের সম্পর্কের বোঝাপড়ার রসায়ন হবু স্ত্রীকে বোঝাতে চাইছিলেন মহেন্দ্রন। তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, দীপার মধ্যে তিনি একটি গোটা পরিবার খুঁজে পেয়েছেন। মা, বোন, প্রিয় বন্ধু— সবাইকে এখন দীপার মধ্যেই খুঁজে পান মহেন্দ্রন।
মূলত পরিবার নিয়ে যন্ত্রণাই তাদের নিয়ে এসেছিল মানসিক হাসপাতালে। বড় দিদির হাতে মানুষ মহেন্দ্রন সম্পত্তি সংক্রান্ত পারিবারিক তিক্ততায় জড়িয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দীপা আবার বাবাকে হারানোর পর বাড়িতে মা এবং দিদির মানসিক অত্যাচারের শিকার। কী ভাবে সেই যন্ত্রণা পেরিয়ে তারা মানসিক রোগের হাসপাতালে এসে পৌঁছেছিলেন তা আজ আর তাদের মনে নেই। তবে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে জীবন শুরু করতে গিয়ে এক নতুন পরিবার গড়ার মুখে দাঁড়িয়ে তারা জানিয়েছেন, তারা খুশি এবং আশাবাদীুলকিন্তু এমন ঘটনা কি স্বাভাবিক? এ সম্পর্কে আইএমএইচ-এর ডিরেক্টর পূর্ণা চন্দ্রিকাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এর আগে এই হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়ে বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে দেখেছেন তিনি। তবে দীপা এবং মহেন্দ্রনের সম্পর্ক অভিনব, ইনস্টিটিউটের ২২৮ বছরের ইতিহাসে এমন কোনও দিন হয়নি।
তিনি আরো জানান,‘‘শহরের এক প্রান্তে হলেও এই হাসপাতাল চত্বর একটি ছোট শহরের মতোই। এখানে রেস্তরাঁ আছে, দোকানপাট আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কের শাখাও আছে। এই হাসপাতালকে শহরের মধ্যে এক অন্য শহর বলে মনে করি আমরা। তবে অন্য শহর হলেও মূল শহরের সঙ্গে যে এর খুব পার্থক্য নেই, তার প্রমাণ দিল এই জুটি।’’পূর্ণা জানান, বেশ কিছু দিন হল চিকিৎসা শেষ হয়েছে দু’জনেরই। কিন্তু দু’জনের কেউই যেহেতু বাড়ি ফিরতে আগ্রহী ছিলেন না, তাই তাদের রাখা হয়েছিল ‘হাফওয়ে হোম’-এ। হাসপাতাল চত্বরের এই অংশটি তাদের জন্য, যাদের ফেরার কোনও জায়গা নেই। যারা বাড়ির দিকে বাড়িয়েও ফিরতে পারছেন না। দীপা সেখানে থেকে হাসপাতাল চত্বরেরই ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন। মহেন্দ্রন কাজ করতেন হাসপাতালের ডে কেয়ার সেন্টারে। এই কাজ তারা বিয়ের পরও করতে পারবেন। তবে হাসপাতালে আর থাকা হবে না তাদের।
দীপা আর মহেন্দ্রন অবশ্য সেই শর্তের কথা জানেন। এরইমধ্যে বাড়ি দেখার কাজ শেষও করে ফেলেছেন তারা। বিয়ের পরই ছাড়বেন হাসপাতাল চত্বর। তবে বাড়িটি হাসপাতালের কাছেই কিনেছেন দু’জনে। যাতে গত দু’বছরে তাদের বর্ধিত পরিবারের কাছাকাছিই থাকতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।