স্পোর্টস ডেস্ক : তড়িগড়ি মাঠ বানিয়ে বিশ্বকাপ কিংবা বড় কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজক বনে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে! কয়েক দিন আগে এ নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়। টি২০ বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরের অন্যতম আয়োজক হয়ে রাতারাতি পার্ক কিংবা খোলা মাঠকে তারা বানিয়ে নেয় ক্রিকেট মাঠ। আর সেখানে খেলতে নেমে বড় বড় দলগুলো যে কতটা বিপাকে পড়েছে, সেটা নতুন করে আর না-ই বলি। কিন্তু কোপা আমেরিকায়ও একই দশা। যে মাঠে আর্জেন্টিনা-কানাডা খেলতে নেমেছিল, সেটা পুরোপুরি আর্টিফিশিয়াল টার্ফ। আর এমন মাঠে যে কেউ বড় ইনজুরিতে পড়তে পারতেন। এ যাত্রায় যেন বেঁচেই গেলেন মেসিরা।
উঠান বাঁকা বলেই:
-কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচের ভেন্যু মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামটির পুরো মাঠই আর্টিফিশিয়াল টার্ফের
-সাধারণত এমন ধরনের মাঠে ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা মেসি-ডি মারিয়াদের নেই বললেই চলে
-যে কারণে আর্জেন্টিনার অনুরোধে ম্যাচের দু’দিন আগে কিছু প্রাকৃতিক ঘাস লাগায় আয়োজক দেশটি তাতেও বদলায়নি টার্ফের আচরণ। বারবার খেলোয়াড়দের পড়ে যাওয়া, বলের নিয়ন্ত্রণ হারানো লেগেই ছিল
যে কারণে এত মিস: সুযোগ নষ্ট কিংবা ভুল খেলারই অংশ। কিন্তু একই ভুল যখন বারবার হয়, তখন সেটা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। এই মুহূর্তে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দল আর্জেন্টিনা। ফিফা র্যাঙ্কিং সেই কথাই বলছে। কিন্তু তারা কানাডার বিপক্ষে নেমে কেমন যেন এলোমেলো ফুটবল খেলা শুরু করে। এর পেছনে বড় একটা কারণ মাঠ। আর্টিফিশিয়াল মাঠকে কোনোমতে প্রাকৃতিক ঘাস দিয়ে ঢেকে ম্যাচ আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে বল নিয়ে দৌড়াতে, এমনকি ঠিকভাবে বলের সঙ্গে সংযোগ মেলাতে বেগ পেতে হয় আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের। মেসি তো একাধিকবার গোলকিপারকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি। ডি মারিয়াও একই ভুলে নাম লেখান। ম্যাচের পর তাই মাঠকে কাঠগড়ায় তোলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা।
তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা: কানাডার মতো দলের বিপক্ষে খেলতে এসে মাঠের এমন অবস্থায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছিল। আমরা আরও বেশি গোল করতে পারতাম। দেখুন, ডি মারিয়া গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল দিতে পারেনি। আসলে যখন আপনি দৌড়াচ্ছেন, তখন দেখছেন আপনি জাম্প করছেন। যে কারণে বলে ঠিকমতো তিনি টাচ করতে পারেননি –এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (গোলকিপার, আর্জেন্টিনা)
মাঠের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এ রকম একটা প্রতিযোগিতায় এসে এমন মাঠে খেলব, এটা খুবই হতাশাজনক –ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (সেন্টারব্যাক; আর্জেন্টিনা)
সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ভাগ্য ভালো যে আমরা জিতেছি। নয়তো এটা খুব সস্তা অজুহাত হতো। আমরা সাত মাস আগেই জানি এখানে খেলব। আর তারা টার্ফ পরিবর্তন করেছে স্রেফ দু’দিন আগে। এটা কোনো অজুহাত নয়। স্টেডিয়াম খুবই সুন্দর। সিনথেটিক টার্ফ অবশ্যই দর্শনীয়। তবে আজকের মাঠ এই ধরনের খেলোয়াড়দের জন্য উপযুক্ত নয় –লিওনেল স্কালোনি (আর্জেন্টিনার কোচ)
কোপা শেষ হয়ে যেতে পারত অনেকের: আর্টিফিশিয়াল টার্ফ, বলা যায় খেলোয়াড়দের জন্য চোটের ফাঁদ। যেখানে পেশাদার ফুটবলারদের বল নিয়ে কারিকুরি দূরে থাক, টিকে থাকাই হয় দুষ্কর। অবশ্য যাদের খেলার অভিজ্ঞতা থাকে, তারা কোনোমতে পার পেয়ে যায়। গত বছর আমেরিকান জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, কৃত্রিম ঘাসে খেললে হাঁটু ও গোড়ালির চোটে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭০ শতাংশ। এমন একটা মাঠে কোপার যাত্রা ম্যাচ খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। যে কারণে ম্যাচে ভয়ংকর কিছু ফাউলের দৃশ্যও দেখা যায়। তাতে মেসি কিংবা প্রতিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড় পড়তে পারত বড়োসড়ো চোটে। তেমনটা হলে কারও কারও কোপাও শেষ হয়ে যেত!
মাঠ পরিচিতি: মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে ফুটবল খুব একটা হয় না। মেজর সকার লিগের কয়েকটা ম্যাচ বাদে দু-একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হয়েছিল। আর্জেন্টিনা নামার আগে গত এপ্রিলে ব্রাজিল এই মাঠে কানাডার কাছে হেরে যায়।
মেসির রেকর্ড: ৩৫-কানাডার বিপক্ষে নেমেই মেসি হয়ে গেলেন এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার। এ নিয়ে কোপার সাতটি আসরে খেলতে নামা মেসির এটি ছিল ৩৫তম ম্যাচ। এই পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন চিলির প্রয়াত গোলকিপার সের্হিও লিভিংস্টোনকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।