রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল ২০২০ সালেই। বুয়েটের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের একটি অংশ মানোত্তীর্ণ নয়।

বিশেষ ধরনের রাবার দিয়ে তৈরি বিয়ারিং প্যাড বসানো হয় পিয়ার ও উড়ালপথের সংযোগস্থলে, যা পুরো কাঠামোর স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো সরবরাহ করেছিল প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। মান খারাপ প্রমাণিত হওয়ায় নতুন প্যাড আমদানি করতে হয়, ফলে প্রকল্পের সময়সূচিতে বিলম্ব ঘটে।
বিষয়টি ২০২০ সালের জানুয়ারিতেই এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের প্যাকেজ ৩ ও ৪–এর নির্মাণকাজে নিম্নমানের প্যাড সরবরাহের ঘটনা ঘটে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার, যার মধ্যে আট কিলোমিটার উড়ালপথ স্থাপন শেষ হয়। অবশিষ্ট অংশে ব্যবহারের কথা ছিল এসব প্যাডের।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে পরীক্ষা শেষে একাধিক প্যাডকে মানহীন ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিভাগ জানিয়েছে, বিয়ারিং প্যাড সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে এবং বরাদ্দের একটি অংশ অব্যবহৃত রয়েছে।
বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) চন্দন কুমার দে জানিয়েছেন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে তারা বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন—কতটি প্যাড মান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে এবং এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রকৌশলীদের মতে, বিয়ারিং প্যাড অনেকটা কুশনের মতো কাজ করে। এটি যানবাহনের চাপ পিয়ারের ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়, ফলে ঝাঁকুনি কম হয় এবং কাঠামো দীর্ঘস্থায়ী থাকে। বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টস (বিআরটিসি)-এর পরিচালক ড. সামছুল হক বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাডের মান খারাপ হলে কাঠামোগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে, চলাচলের সময় ঝাঁকুনি অনুভূত হবে এবং পিয়ারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বনানী ফ্লাইওভারে অন্তত ১৮টি স্থানে গাড়ি চলার সময় ঝাঁকুনি অনুভূত হয়, যা বিয়ারিং প্যাড সঠিকভাবে কাজ না করার ফল। মেট্রোরেলেও নিম্নমানের প্যাড ব্যবহার করা হলে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
ড. সামছুল হক আরও জানান, নির্দিষ্ট সময় পর বিয়ারিং প্যাড বদলানোর নিয়ম থাকলেও দেশে এ প্রথা অনুসরণ করা হয় না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ও প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দিন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি। তবে ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘বুয়েট কিছু প্যাডকে মানহীন বললেও অন্যান্য পরীক্ষায় সেগুলো মানসম্মত পাওয়া গিয়েছিল। তবুও নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।’ সূত্র: দেশটিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



