বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : কম্পিউটার প্রযুক্তির সূচনা হয়েছিল ১৯৪২ সালে। তখন থেকে শুরু করে প্রযুক্তির ধারাবাহিক উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে আরও সহজ ও গতিময়। তবে প্রতিনিয়ত উন্নত সংস্করণ আসায় পুরনো কম্পিউটারগুলো ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে। আর ২০২৫ সালের অক্টোবরে প্রায় ২৪ কোটি উইন্ডোজ ১০ চালিত কম্পিউটার অচল হয়ে পড়বে, এমনটাই জানিয়েছে মাইক্রোসফট।
Table of Contents
উইন্ডোজ ১০-এর সমাপ্তি: কী ঘটছে ১৪ অক্টোবরের পর?
২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে উইন্ডোজ ১০-এর জন্য আর কোনো সিকিউরিটি আপডেট, সফটওয়্যার হালনাগাদ বা কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে না মাইক্রোসফট। এর অর্থ, এই অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পিউটারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে সাইবার আক্রমণের জন্য।
অন্যদিকে, উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেডের জন্য প্রয়োজন উন্নত হার্ডওয়্যার। যেমন:
- TPM 2.0 (Trusted Platform Module) চিপ
- ১ গিগাহার্জ ডুয়েল কোর প্রসেসর
- ৪ জিবি র্যাম
- ৬৪ জিবি স্টোরেজ
এই স্পেসিফিকেশন অনেক পুরাতন কম্পিউটারের নেই, বিশেষ করে ২০১৬ সালের আগের মডেলগুলোতে TPM 2.0 চিপ অনুপস্থিত।
কী হবে এই পুরাতন কম্পিউটারগুলোর?
বিশ্বজুড়ে ২৪০ মিলিয়নেরও বেশি কম্পিউটার এখনো উইন্ডোজ ১০ চালিত। এসব ডিভাইস যদি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তাহলে বিশাল আকারের ইলেকট্রনিক বর্জ্যের সৃষ্টি হবে। ক্যানালিস রিসার্চ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, যদি এই কম্পিউটারগুলো ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে ৪ লাখ ৮০ হাজার টনের বেশি ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হবে। এই পরিমাণ ই-বর্জ্য পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিকল্প কী?
মাইক্রোসফট ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরা “Extended Security Updates” (ESU) গ্রহণ করতে পারবেন। যদিও এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছুটা সহায়ক হবে, তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে নতুন কম্পিউটার কেনার কথা ভাবতে পারেন।
তবে পুরনো কম্পিউটার মানেই ফেলে দেওয়ার বিষয় নয়। অনেক ব্যবহারকারী লিনাক্স মিন্ট বা উবুন্টুর মতো হালকা ও নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন, যেগুলো পুরনো হার্ডওয়্যারেও ভালো পারফর্ম করে। এছাড়া কম্পিউটারগুলোর রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবহার পরিবেশের জন্য কার্যকর হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাত্র ১৫–২০ শতাংশ ই-বর্জ্য সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
প্রযুক্তি জগতের সমালোচনা
মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সমালোচনায় সরব। তাদের মতে, যদি উইন্ডোজ ১০-এর সাপোর্ট আরও কিছুদিন বাড়ানো হতো বা উইন্ডোজ ১১-এর হার্ডওয়্যার শর্ত কিছুটা শিথিল করা হতো, তাহলে ই-বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে পরিবেশকে রক্ষা করা যেত।
মাইক্রোসফটের নতুন নীতির কারণে, প্রযুক্তি খাত যেমন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে, তেমনি পরিবেশের ওপর চাপও বাড়ছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরের পর ২৪ কোটি উইন্ডোজ ১০ চালিত পিসি কার্যত অচল হয়ে পড়বে, এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী ই-বর্জ্য সংকট আরও গভীর হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।