জুমবাংলা ডেস্ক : শীতের রুক্ষতাকে কাটিয়ে প্রকৃতির সজীবতা ফিরিয়ে আনে ঋতুরাজ বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের অন্যতম বার্তা বাহক পলাশ। আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে নয়নাভিরাম পলাশ ফুল না দেখলে যেন অপূর্ণতা থেকে যায় বসন্তের। সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের।
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়কের বুক চিরে থাকা সড়ক বিভাজনে শতশত পলাশ গাছ আপন মহিমায় রঙ ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে বসন্তের উপস্থিতি। মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা-বাগুর বাস স্টেশন থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে শতশত পলাশ গাছ। ফাগুনের পাতা ঝড়া রুক্ষ প্রকৃতিকে জয় করে নগ্ন ডাল জুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নিরবে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে পলাশ। ওই বিভাজনে শতাধিক পলাশ ফুল গাছ সেজেছে অপরুপ সাজে। গাছের সব ফুল ফুটে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় মাস জুড়ে।
পিচঢালা পাথরের মহাসড়কে বুক চিরে থাকা ছায়ানিবিড় ব্যস্ত সড়ক বিভাজনে যাত্রীদের চোখ জুড়াচ্ছে পলাশের মোহনীয় রূপ। পাতাঝড়া পলাশ গাছের পত্রহীন ডাল যেন পরিধান করেছে ফুলেল পোশাকে। প্রতিটি ডালে সারিবদ্ধ রাশি রাশি ফুল প্রকৃতিতে লেগেছে নান্দনিক ছোঁয়া। পলাশ গাছে কোকিল, শালিক সহ বিভিন্ন পাখিদের কলকাকলিতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। দূরন্ত পাখিরা এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে সৌন্দর্য্যে যোগ করছে বাড়তি মাত্রা।
বিলুপ্ত প্রায় পলাশ ফুলের মোহনীয় রূপ এক ঝলক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। আবার যাত্রাপথে ব্যক্তিগত পরিবহন থামিয়ে পলাশের সাথে ক্যামেরা বন্দি হতে ভুল করেন না অনেকে। কেউবা গাছের তলা থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছেন পলাশের কমলা রঙের ঝড়া পাঁপড়ি।
এক সময়ে এই পলাশ গাছ ও ফুল গ্রামাঞ্চলের আঁকাবাঁকা সড়কের মোড়ে, বাগানে বা যত্রতত্র দেখা মিললেও এখন বিলুপ্ত প্রায়। পলাশের নাম জানেন না এমন লোক পাওয়া যেমন দুস্কর তেমনি এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা পলাশ ফুল চিনেন বা দেখেছেন এমন সংখ্যাও খুবই অপ্রতুল।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, চান্দিনাতে আগে কয়েকটি পলাশ গাছ চোখে পড়তো। বেশ কয়েক বছর যাবৎ পলাশ গাছ বা ফুল আর চোখে পড়ে না। চান্দিনা থেকে বিলুপ্ত প্রায় এই গাছটি। তবে মহাসড়কে পলাশ গাছ রোপন করায় নতুন করে দেখতে পেয়েছি চিরচেনা এই ফুলটিকে।
মহাসড়কের চান্দিনার তীরচর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা ঢাকার বাসিন্দা শ্রাবণী আক্তার জানান, পলাশের নাম শুনেছি, কিন্তু কখনও দেখিনি। আজ মহাসড়কের উপর দিয়ে যাওয়ার পথে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে গাড়ি না থামিয়ে পারলাম না। এখন আপনার কাছে জানতে পারলাম এটি পলাশ ফুল!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রুপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি/ অশোকে পলাশে…/ রাঙ্গা নেশা মেঘে মেশা/ দিনের আকাশে’। পলাশ ফুল নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামেরও একটি জনপ্রিয় গান রয়েছে-
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল
এনে দে এনে দে নইলে
বাঁধব না, বাঁধব না চুল’…
পলাশের ইংরেজি নাম Flame of the Forest (ফ্লেইম অফ দ্যা ফরেস্ট) অর্থাৎ অরণ্যের অগ্নিশিখা। পলাশের আরেক নাম কিংশুক। বৈজ্ঞানিক নাম ইঁঃবধ সড়হড়ংঢ়বৎসধ (বুটিয়া মনোস্পার্মা)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ-এর উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা জানান, পলাশ বৃক্ষটি ঋধনধপবধব পরিবারের সদস্য। পলাশ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। শীতে এর পাতা ঝরে যায়। গাছটির বাকল ধূসর, শাখা-প্রশাখা এবং কাণ্ড আঁকাবাঁকা হতে দেখা যায়। পলাশের নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতারা ত্রিপত্রী। এর ফুল অনেকটা শিমের মতো। শাখা-প্রশাখায় ফুলগুলো থোকায় থোকায় ফোটে। পলাশের কুঁড়ি দেখতে টিয়া ও ময়না পাখির ঠোঁটের মতো। এর বংশবিস্তার ঘটে ডাল ও বীজ বপনের মাধ্যমে। ওষুধি গুনে ভরপুর এই গাছ রোপনে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন এই উদ্ভিদবিদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।