সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার ঐতিহ্যবাহী ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙার উদ্যোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জানা গেছে, শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এই প্রতীকী স্থাপনাটি মাত্র ১৮ লাখ টাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে, যিনি এরইমধ্যে শ্রমিক দিয়ে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের হস্তক্ষেপে ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

মিনিস্টার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারই নামানুসারে বাড়িটি স্থানীয়ভাবে মিনিস্টার বাড়ি নামে পরিচিত হয়।
১৮ লাখে বিক্রি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ভবনটি মাত্র ১৮ লাখ টাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি শ্রমিক দিয়ে ধীরে ধীরে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। শ্রমিকদের মতে, পুরো বাড়ি ভাঙতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ভবনটিতে গিয়ে পাওয়া যায় আব্দুল হামিদের নাতি আনিসুল ইসলামকে।
তিনি বলেন, ‘বাড়িটি বহু পুরনো, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই ভাঙতে হচ্ছে। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু উপায় নেই।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পদক্ষেপ
শুক্রবার সকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক মিনিস্টার বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি ভাঙার কাজ আগামী রোববার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, স্থপতি রাজন দাশসহ স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা।
যাদুঘর করার প্রস্তাব
পরিবেশকর্মী আশরাফুল কবির বলেন, ‘এই বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি ভাঙার পরিবর্তে সংরক্ষণ করে যাদুঘরের রূপ দেয়া যেত। পরিবারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল।’
স্থপতি রাজন দাশ জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনভাবে ভবনটি রক্ষা করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
শতবর্ষী স্থাপনা
প্রায় ৮১ শতক জমির ওপর নির্মিত এই বাড়ির সঠিক নির্মাণকাল জানা না গেলেও স্থানীয়দের দাবি, এটি শতবর্ষের পুরনো। আব্দুল হামিদ ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ, শিক্ষামন্ত্রী ও বিধানসভার স্পিকার। দেশ ভাগের পর তিনি পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার বোন হাফিজা বানু ছিলেন আইনজীবী আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের স্ত্রী এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের দাদি।
কোন পাখি বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচার জন্য মেঘের উপর দিয়ে উড়ে চলে যায়
স্থানীয়দের আক্ষেপ
নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক মূল্যবোধের জন্য বিখ্যাত এই বাড়ি ভাঙা শুরু হওয়ায় স্থানীয়রা গভীর আক্ষেপ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সূত্র ও ছবি : সময় নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



