জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঈদের জামাত নিয়ে মসজিদ কমিটির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ঈমাম নিয়োগ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মির্জাপুর উপজেলার চার নং ভাওড়া ইউনিয়নের ভাওড়া সরকার পাড়া জামে মসজিদে এ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোমবার (২ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলম।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া সরকারপাড়া জামে মসজিদের কমিটি নিয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সেনা কর্মকর্তা দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করেছে। মসজিদের দুই কমিটির বিরুদ্ধে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দুই পক্ষই মির্জাপুর থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (৩ মে) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ভাওড়া সরকারপাড়া জামে মসজিদের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে। আজ মঙ্গলবার ঈদের জামাত নিয়ে দুই গ্রুপ দুই জন ঈমাম নিয়োগ দেওয়ায় এলাকায় মতবিরোধ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হতে পারে। এ জন্য ৪০০শ গজের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন সমা সমাবেশ, পিকেটিংসহ সকল ধরনের কাজ বন্ধ রেখে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক পিন্টুর অভিযোগ, মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের এবং কোষাধ্যক্ষ বাদল মিয়া ১৩-১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা দায়িত্ব পালনের সময় মসজিদের ওয়াজ মাহফিল ও মসজিদ উন্নয়নের জন্য সুধীজনের অনুদানের প্রায় ২০ লাখ টাকা নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। গত কোরবানির ঈদের নামাজে মসজিদে ঈমামকে গালাগাল করেছে। মুসুল্লীগন টাকার হিসাব চাইতে গেলে তাদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন। মুসুল্লীগন ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ পরিচালনার জন্য নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন। নতুন কমিটির সভাপতি আব্দুল করিম বাদী হয়ে পূর্বের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষকে অভিযুক্ত করে গত গত বছরের ২৪ জুলাই ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন মির্জাপুর থানায়। একই দিন সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
অপর কমিটির সভাপতি ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ও কোষাধ্যক্ষ বাদল মিয়ার অভিযোগ, যারা থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন ঐ অভিযোগের কোন ভিত্তি ও সত্যতা নেই। সাবেক সেনা কর্মকর্তার মদদে ইতিপূর্বে মসজিদের নিম্ন মানের কাজ ও বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি না করেই চক্রটি রাতের আধারে অবৈধ ভাবে অপর একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ২০ লাখ টাকার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সভাপতি আব্দুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক পিন্টু ও কোষাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেনসহ কতিপয় সদস্য মসজিদের দানবাক্সের ভেঙ্গে বিপুল অংকের টাকা এবং চেক জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের টাকা অনিয়ম দুনীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৫ জুলাই থানায় ও ইউনও অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে দুই শিক্ষকসহ ১৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার দাবী করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার পুলিশ জানায়, ভাওড়া গ্রামের সরকার পাড়া জামে মসজিদ কমিটির দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে মসজিদ কমিটি ও অর্থ আত্মসাত নিয়ে দুই পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৬ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবত থাকবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মসজিদ কমিটির দুই গ্রুপ মসজিদ দখল নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঈমাম নিয়োগ দেওয়ায় ঈদের জমাত নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় ফৌজধারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কোন পক্ষই মসজিদ এলাকার ৪০০শ গজের মধ্যে ঈদের জামাত পড়তে পারবে না। এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।