ভূমিকম্পে সারা দেশে এখন পর্যন্ত দুই শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকায় ৪ জন, নরসিংদীতে ৫ জন এবং নারায়ণগঞ্জে এক জন রয়েছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।

রাজধানীর বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশীষ কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, “পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকায় একটি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম (২১), বয়সী কাপড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪১) ও তার ছেলে আবুল আজিজ রেমন (১২) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই পাশের দোকান থেকে গরুর মাংস কিনতে ভিড় করেছিলেন।
নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে উঁচু ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরো ৩ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে ওমর (৮), পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতাপাড়ার কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫), একই উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের নাসিরউদ্দিন (৬০) ও শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ফোরকান (৪০)।
ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে এক বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা বিশেষজ্ঞের
“বড় ভূমিকম্প আসার আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয় এটি তার আগাম বার্তা,” এমনটা মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী। খবর বিবিসির।
আনসারী বলেন, “সাধারণত একশ থেকে দেড়শ বছর পরপর একটি অঞ্চলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের কাছাকাছি এলাকায় গত দেড়শ বছরে একটি বড় ও প্রায় পাঁচটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আশপাশে সবশেষ বড় ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছিল প্রায় একশ বছর আগে। তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্প কাছাকাছি সময়ে হতে পারে।”
আনসারী বলেন, “বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে এটিই স্বাভাবিক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে যে ভবনগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেড়েই চলেছে, বলেন তিনি।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংহতি প্রকাশ
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘ কার্যালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি সংহতি ও গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস পৃথক এক বার্তায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার শোক
ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা এক শোকবার্তায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বিশ্বের সবচেয়ে দামি জিনিস কোনটি? যা দিয়ে একটি শহরকে কেনা যাবে
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে প্রথমে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৭। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



