মব সৃষ্টিকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তাঁর বাসার সামনে ‘মব’ সৃষ্টির ঘটনার পর আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি শঙ্কার কথা জানান।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাকে মব সৃষ্টিকারীরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসার সামনে ওরা অবস্থান নিয়েছে। আজ আপনাদের মাধ্যমে আমি সারা জাতিকে জানাতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমানের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রোববার রাত থেকে তাঁর বাসার সামনে অবস্থান নেন একদল লোক। আগের তাঁর নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জেও কিছু মানুষ বিক্ষোভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নেতা–কর্মীরা তাঁর কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার যে এলাকা— ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের মানুষের কাল থেকে বোধ হয় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ, যেটা আমার নির্বাচনী এলাকা (কিশোরগঞ্জ-৪), সেখানের মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আমি দেশের একজন মানুষ; সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুযায়ী, এ দেশে আমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে।’
মব সৃষ্টিকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ওদেরকে চিনি না—শিশু, বাচ্চা তো। ওরা সকাল ৭টা থেকে সেখানে আছে। শুনেছি, তারা একটি ছাত্রসংগঠনের। তবে এটা আমাদের দলের ছাত্রসংগঠন নয়। আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন—এরা কারা। মব সৃষ্টিকারীর সংখ্যা সাত থেকে নয়জন। ওরা বলছে, ফজলু পাগলাকে গ্রেপ্তার করো, ফজলু পাগলাকে বাঁচতে দেব না, ফজলু পাগলাকে হত্যা করো—এ রকম আরকি।’
সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘আমি নাকি ফজলু পাগলা। এই ফজলু পাগলা নামটি প্রথমে আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী। প্রথমে এই কথাটা বলেছেন মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।’
দলের কাছ থেকে সহযোগিতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দল তো সাপোর্ট করবেই; করবে না কেন? আমি ও আমার পরিবার যে হত্যার হুমকির মধ্যে পড়েছি, সেটা অবশ্যই আমি আমার দলকে জানাব। জানাব না কেন? আজ সারা জাতিকেও এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানালাম।’
মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, দেশ-বিদেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা ইউটিউবার ও যারা তাঁদের (স্বাধীনতাবিরোধীর) পক্ষে সাংবাদিকতা করে, তারাই এসব করছে। বেশ কিছু দিন ধরে তারা বলছে, মব জাস্টিস করো, ফজলুর রহমানের ওপর মব প্রযোজ্য। আর ফ্রান্স থেকে দুজন ইউটিউবার বলেছে—তাঁকে (ফজলুর রহমান) হত্যা করো। পরশু রাতে দেখলাম যে, জামায়াতের একজন ইউটিউবার বলছে—ফজলু পাগলাকে জবাই করে হত্যা করতে হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বলেছি, বলে যাব। আমি যে কথা বলেছি, এতে যদি কারও প্রতি অসম্মান করে থাকি, আঘাত করে থাকি, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তারা এটার জবাব দেবে। আমি জবাব দেব। এটা পরস্পরকে হত্যা করার কোনো ব্যাপার না। আমার বাসার সামনে মব করার কোনো ব্যাপার না।’
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তাঁদের ‘কালো শক্তি’ আখ্যা দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা ‘অভ্যুত্থানের নেতা নয়, ৫ আগস্টের অভিনেতা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।