বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এক লাইসেন্সের আওতায় আসছে মোবাইল অপারেটরগুলোর সব লাইসেন্স। অপারেটরগুলোকে আর আলাদা আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে না। টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি বা তারপরে যেসব প্রযুক্তি আসবে তার জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে না। একটি লাইসেন্স নিলেই তাতে সব লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে নতুন যে গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটররা এই লাইসেন্সের আওতায় সিম বেজড রাউটার দিয়ে ওয়াই-ফাই সেবা দিতে পারবে গ্রাহকদের। আর এতে আপত্তি তুলেছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি)।
অপারেটররা বলছে, নতুন লাইসেন্স হাতে পেলে তারা ধীরে ধীরে এই সেবা দিতে শুরু করবে। অপরদিকে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এটা হলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ঝুঁকির মুখে পড়বেন। যদিও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তরফে তাদের বারবার বলা হয়েছে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, সিম ভিত্তিক রাউটার দিয়ে মোবাইল অপারেটররা ওয়াই-ফাই সেবা দিতে পারবে। শিগগিরই অপারেটরদের হাতে নতুন লাইসেন্স তুলে দেবে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমে বলেন, আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার দেখেছি। প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো বিষয় কমপ্লাই করেছে। আশা করি অনুমোদন পেতে তাদের কোনও সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সিম বেজড রাউটার এলে তারহীন ওয়াই-ফাই সেবা পাওয়া যাবে। ব্যবহারকারী বাসা, অফিসের যেখানে থাকবেন সেখানেই রাউটার রেখে কাজ করতে পারবেন। ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ওয়াই-ফাই (আইএসপি) ও ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড (মোবাইল ইন্টারনেট) মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু হবে না। দুটো দুই ধরনের সেবা। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান এটা দেবে। মোবাইল ফোন অপারেটররা আগে এই সেবা দিতে পারতো না। ইউনিক লাইসেন্সে (এক লাইসেন্সের অধীনে সব লাইসেন্স) এই সুযোগ দেওয়া আছে। ফলে মোবাইল অপারেটররা এই সেবা দিতে পারবে।
দেশে টিপিলিংক-সহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের সিম বেজড রাউটার রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন সিম বেজড রাউটার তৈরির জন্য বিটিআরসির কাছে অনুমোদন চেয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী ভুঁইয়া বলেন, আমরা উৎপাদনকারী হিসেবে সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার তৈরি করার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেছিলাম। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিটিআরসির ফ্যাক্টরি ভিজিট ছিল। যেসব বিষয় বিটিআরসির শর্ত ছিল আমরা সেসব কমপ্লাই করেছি। আশা করছি সিম বেজড ওফাই-ফাই রাউটার উৎপাদনের অনুমোদন পাবো। এটাই হবে দেশীয় সিম বেজড ওয়াই-ফাই রাউটার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৭ মার্চ বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে ইউনিক লাইসেন্স হস্তান্তর করবে। ১৫ বছরের জন্য দেওয়া হবে এই লাইসেন্স। এই একটি লাইসেন্স নিলে অপারেটরগুলোকে আলাদা কোনও লাইসেন্স (টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জির জন্য আলাদা লাইসেন্স) নিতে হবে না। একটি লাইসেন্স নিলে সেই লাইসেন্স সব কিছু কাভার করবে। এমন কী ফাইভ-জি বা তার পরে আরও যেসব প্রযুক্তি সেবা আসবে তার কোনও আলাদা কোনও লাইসেন্স নিতে হবে না অপারেটরগুলোকে। সেই ইউনিক লাইসেন্স বা ইউনিফায়েড লাইসেন্সের গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরগুলোর জন্য এফডাব্লিউএ (ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস) সেবাদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোও এই সেবা দিতে পারবে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, আমরা নতুন লাইসেন্স হাতে পাই। লাইসেন্স পেলে আমরাও ধীরে ধীরে এই সেবা চালু (ফিক্সড ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড) করবো। এই সেবা এফডাব্লিউএ (ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস) সেবা হলো ফাইভ-জি অথবা ফোর-জি, এলটিই ওয়্যারলেস প্রযুক্তি।
নতুন এই সেবা আইএসপিগুলোর (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ব্রডব্যান্ড সেবার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, এ জায়গায় আমাদের আপত্তি আছে। ইউনিক লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বারবার বলা হয়েছে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের (আইএসপি ব্যবসায়ী) সুরক্ষা দেওয়া হবে। মোবাইল অপারেটররা যদি সিম বেজড রাউটারের মাধ্যমে ওয়াই-ফাই সেবা দেয় তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হলো? তিনি জানান, শিগগিরই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সঙ্গে বসবেন। বিষয়টির সুরাহা না করলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।