বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : শুধু কথা বলাই নয়, মোবাইল ফোন মানুষের জীবন বদলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর শুধু নেতিবাচক ব্যবহারই নয় বরং এটি কোনো কোনো মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে স্বল্প শিক্ষিত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে বর্ণমালা শিখে, নতুন ভাষা শিখে, মুখে কথা বলে মোবাইল টাইপ করে (ভয়েস টু টেক্সট)।
এ ছাড়া লিখিত মেসেজ ভয়েসে কনভার্ট করে শুনে, ইমেজ কিংবা অডিও বা ভিডিও ফাইল ক্লাউডে সেভ করে এবং মোবাইলে ভিডিও বানিয়ে টিকটকে পোস্ট করে। তাদের কাছে মোবাইল কেবলমাত্র জীবনের একটি নতুন অনুষঙ্গই না, মোবাইল তাদের কাছে এমন একটা প্রযুক্তি যা মানুষের জীবনের মৌলিক সত্তার জাগরণ ঘটায়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআডিএস) সেমিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সেমিনারে বলা হয়- বিকাশ, রকেটসহ নানা ব্যাংকিং কার্যক্রমও এখন মোবাইলনির্ভর। এখন ই-কমার্স আর বলা হয় না, বলা হয় এম কমার্স। সুতরাং মোবাইল মানুষদের অনেক কিছুই শেখাচ্ছে এবং জীবনকে সহজও করেছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘মোবাইল ফোন: স্কিল, কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো মোহাম্মদ গোলাম নবী মজুমদার।
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, বেসিসের সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ
গবেষণা পত্রে গোলাম নবী মজুমদার বলেন, মোবাইল ফোনের গুরুত্বটা তখনই স্পষ্ট হয় যখন তাদের (গবেষণায় অংশ নেওয়াদের) ফোনটা প্রয়োজন কিন্তু কাছে থাকে না বা তখন সেটা ব্যবহার করার উপযোগী নয়। মোবাইল ফোন কেবল মাত্র একটা যন্ত্র নয় যা লোকে ব্যবহার করে। মোবাইল নামক এই ডিজিটাল মেশিন ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে মানুষ আসলে নিজেকেই বার বার নতুন করে আবিস্কার করে। যা সাধারণত ভাবা হয় অসম্ভব। মোবাইলের বরাতে সেই আপাত অসম্ভবই হয়ে উঠে সম্ভব।
সেমিনারে বলা হয়, দেশের পিছিয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে (যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর ও যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বা নামমাত্র) মোবাইল ফোনের নিত্যদিনের ব্যবহার নিয়ে এক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সারা দেশের আট বিভাগের ২৪০ জনের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এরমধ্যে ১৩০ জন নারী। প্রথমে ইন্টারভিউ রেকর্ড করা হয়েছে, তারপর তা ট্রান্সক্রিপ্ট করে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। একজন মোবাইল ব্যবহারকারীর গল্প বিস্তারিত জানার জন্য আমরা একাধিকবার ফলোআপ ইন্টারভিউ করেছি। পাশাপাশি সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন প্রমাণ।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। কিন্তু এ যে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব মানব জীবনে আছে সেটি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। এই গবেষণায় দেখা গেছে কিভাবে একজন সাধারণ মানুষও মোবাইল ফোনের ইতিবাচক ব্যবহার করে। অনেককে আইসিটি নিরাপত্তার বিষয়টিও সচেতন থাকতে দেখা যায়। এই গবেষণা আরও বিস্তৃত করা দরকার।
সাত্তার মন্ডল বলেন, মোবাইল জীবনের অংশ। এটি দ্রুত মানুষের জীবনের সত্তা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এটি সমাজের মূল্যবোধকে নষ্টও করেছে। সেই সঙ্গে সময়ের মতো দুষ্প্রাপ্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে মোবাইল ফোনে। এসব নিয়েও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে।
আলমাস কবীর বলেন, মোবাইল মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে সবকিছুই আছে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন এখন অলিক কিছু নয়। এটির বাস্তবায়ন সম্ভব। মোবাইল ফোনের মতো ডিভাইস মানুষকে নতুন জীবন দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।