আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি ভারতের বাজারে টমেটোর দাম ৭০০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে পেঁয়াজের বাজারের চলমান অস্থিরতা টমেটোর থেকে বেশি ভোগাচ্ছে ভারত সরকারকে। ফলে নির্বাচনের আগে দেশের অভ্যন্তরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে নতুন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ করেছে। পাশাপাশি ভর্তুকিমূল্যে স্থানীয়ভাবে বিক্রির পরিকল্পনাও করছে দেশটির সরকার।
পেঁয়াজ, টমেটো ও আলু এই তিনটি সবজি ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় এতটাই গুরুত্ব বহন করে যে অতীতে যখনই ফসলের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দাম বেড়েছে, তখনই সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আসতে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু এই তিনটি খাদ্যপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের প্রতি ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। এইটি তাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের রন্ধনপ্রণালিতে টমেটো বা আলুর বিকল্প থাকলেও পেঁয়াজের কোনো বিকল্প নেই।
দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ৬ আগস্ট দেশটির বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ রুপি, যা ২০ আগস্ট বেড়ে হয় ৩৭ রুপি। অপরদিকে ৬ আগস্ট প্রতিকেজি টমেটো ছিল ২০৭ রুপি, যা ২০ আগস্ট নাগাদ নেমে আসে ৭২ রুপিতে।
ভারতের টমেটো উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে ভারি বর্ষণের কারণে উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে দেশটির বাজারে টমেটোর দাম আট গুণ বৃদ্ধি পায়। যার জন্য ভারত সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। যদিও বর্তমানে টমেটোর দাম কমে এসেছে, তবে সরকার পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন হওয়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মূলত দেশটির বৈরী আবহাওয়ার কারণে গম ও চালের মতো অনেক খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এর দামে উর্ধ্বমুখিতা লক্ষ করা গেছে। এর জন্য সরকার পেঁয়াজ নিয়ে এখনই পদক্ষেপ হাতে নেয়া শুরু করেছে।
দেশের বাজারে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকা মোদি সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি পরের বছর জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে থাকতে চান। দেশটির বাজারে খুচরা মূল্যস্ফীতি বর্তমানে বিগত ১৫ মাসের সর্বোচ্চ। ফলে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা মোদির জন্য একটি চ্যালেঞ্জই বলা যায়।
এরই মধ্যে মোদি সরকার গম, চাল ও চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এমনকি গম আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করছে খাত সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি ভারত সরকার নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য খোলাবাজারে টমেটো এবং খাদ্যশস্য বিক্রি করছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজারে সরকারি মজুত থেকেও খাদ্যপণ্য ছাড় করছে।
এ বিষয়ে বার্কলেস ব্যাংক পিএলসির অর্থনীতিবিদ রাহুল বাজোরিয়া জানান, ভারত সরকার আগামী মাসগুলো খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এরই মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অন্যতম রাজ্য মহারাষ্ট্রে মাঠপর্যায়ে পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার জন্য ফসলের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন ভারতে সামগ্রিকভাবে মৌসুমি বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। যার প্রভাবেই খাদ্যের দাম বেড়েছে। বছর ব্যবধানে দিল্লিতে গমের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ, চালের দাম ২২ শতাংশ, টমেটোর দাম ৮০ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
ভারতের মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের ৪০ ভাগের বেশিই উৎপাদিত হয় মহারাষ্ট্রে। তবে রাজ্যের কিছু অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হওয়ায় এরই মধ্যে সামগ্রিকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে, যা নির্বাচনের আগে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের জন্য।
এ বিষয়ে বাজোরিয়া বলেন, ‘অবশ্যই, সরকারের মনোযোগ এখন নির্বাচনের দিকে। জুলাই মাসে দেশের বাজারে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে মূল কারণ ছিল পচনশীল ও মৌসুমি সবজির চড়া দাম। তবে আমি চাল ও গমের মতো খাদ্যের দাম নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।