বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ইতিমধ্যেই নাসার পাঠানো পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান করছে। এমতাবস্থায়, এবার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা আবিষ্কার করল পারসিভারেন্স রোভার। পাশাপাশি, সম্প্রতি আবিষ্কার করা নমুনায় জৈব পদার্থও পাওয়া গেছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, এই আবিষ্কার কোনো গুপ্তধনের চেয়ে কম নয় বলে টুইট করেছে নাসা।
এমতাবস্থায়, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, একটা সময়ে হ্রদের মত অবস্থায় থাকা জেজিরো ক্রেটারে ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে জীবনধারণের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল। এই প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনাতে থাকা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পারসিভারেন্স প্রকল্পের বিজ্ঞানী কেন ফার্লে বলেন, “আমরা যে শিলাগুলি পরীক্ষা করছি তাতে এখনও পর্যন্ত এই মিশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বনিক উপাদান খুঁজে পেয়েছি।”
১৮ মাস ধরে চলছে মিশনটি: জানিয়ে রাখি যে, লাল গ্রহে পারসিভারেন্স রোভারের মিশন প্রায় ১৮ মাস আগে শুরু হয়েছিল। সেখানে রোভার মাইক্রোবিয়াল জীবনের নিদর্শন খুঁজছে। পাশাপাশি, রোভার পাথরের এমন নমুনাগুলির সন্ধান করছে যেখানে জীবনের প্রমাণ সংরক্ষিত থাকতে পারে। এদিকে, এই মিশনে এখনও পর্যন্ত ১২ টি পাথরের নমুনা নিয়েছে রোভার। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, ২০৩০-এর দশকে বেশ কয়েকটি মিশনের মাধ্যমে নমুনাগুলিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
জেজিরো ক্রেটারের আকার ৪৫ কিমি: জানা গিয়েছে, জেজিরো ক্রেটার হল প্রায় ৪৫ কিলোমিটারের একটি বৃত্তাকার অবস্থান। বিজ্ঞানীদের অনুমান, কোনোসময়ে এই গর্তটি নদীর সাথে মিলিত হয়ে একটি বিশাল হ্রদ তৈরি করেছিল। পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, এই গর্তের পলিতে মঙ্গলের ইতিহাস সংরক্ষিত আছে। তাঁদের বিশ্বাস, এটি যখন জলে পূর্ণ হয়েছিল, তখনই এর কণাগুলি পাথরের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
জেজিরো ক্রেটার থেকে কি কি মিলেছে: রোভার যখন এই গর্তটি পরীক্ষা করে, তখন সেটি আগ্নেয়গিরির প্রমাণ পেয়েছে। এর সাথে, রোভারটি পলির মধ্যে বেশ কয়েকটি শিলার স্তরও খুঁজে পেয়েছে। যা মঙ্গলের পরিবেশগত উপাদানের বিষয়টিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী কেন ফার্লে বলেন, “ওই ডেল্টাতে বিভিন্ন পাললিক শিলা যেমন আছে, ঠিক তেমন আগ্নেয়গিরির পাথরও রয়েছে। যা ম্যাগমার স্ফটিক গঠনের কারণে গঠিত হয়। এগুলোও পলিতে পাওয়া গেছে। পাথর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের একটি সমৃদ্ধ প্রমাণ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটি বেলেপাথর পেয়েছি। যাতে শক্ত পাথর এবং দানা ছিল। যেটি জেজিরো ক্রেটার থেকে কিছুটা দূরে ছিল।”
মঙ্গলে কার্বন পাওয়া গেছে: মিশনটিতে রোভারের একটি নমুনা পাথরের নাম দেওয়া হয়েছে ওয়াইল্ডক্যাট রিজ। কোটি কোটি বছর আগে কাদামাটি এবং বালি জমাট বাঁধার সময় নোনা জলের হ্রদে এই পাথরটি তৈরি হয়েছিল। এটি রোভারে বসানো একটি ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল, যার নাম ছিল SHERLOC। এই প্রসঙ্গে পাসাডেনায় নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী সুনন্দা শর্মা বলেছেন, বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, জৈব খনিজগুলি মূলত কার্বন এবং হাইড্রোজেনের স্থিতিশীল অণু। যেগুলি সালফেটের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। সালফেট খনিজগুলি প্রায়শই পাললিক শিলার স্তরগুলির মধ্যে পাওয়া যায়। কার্বনিক অণু মঙ্গল গ্রহে জীবনের সাথে যুক্ত। যদিও শুধু এই অণু থেকেই বলা যাবে না যে সেখানে প্রাণ ছিল। তবে, এটি একটি দুর্দান্ত আবিষ্কার।
নমুনাগুলি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে: মিশনের মাধ্যমে এই নমুনাগুলি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে নাসা। এর পাশাপাশি, মঙ্গলে অনেক খালি টিউব ছেড়ে দেওয়া হবে। যাতে রোভার অন্যান্য পাথরের নমুনা নিতে পারে এবং তাদের পরীক্ষা করতে পারে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।