লাল গ্রহ মঙ্গল থেকে আসছে এক রোমাঞ্চকর খবর। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মঙ্গলে এমন কিছু খনিজ উপাদান ও শিলার নমুনা খুঁজে পেয়েছেন, যা প্রমাণ করে একসময় সেখানে হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। এটি এখন পর্যন্ত মঙ্গলে জীবনের সবচেয়ে স্পষ্ট চিহ্ন বলেই মনে করছেন তাঁরা।
২০২৪ সালে নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারের (মঙ্গল গ্রহের একটি গর্ত, যা প্রায় ৩৫ মিলিয়ন বছর আগে একটি হ্রদের স্থান ছিল বলে মনে করা হয়) উত্তরে শুকনো নদীখাত ‘নেরেতভা ভ্যালিস’-এর তীরে এক তীরের মতো আকারের শিলা আবিষ্কার করে।
ওই শিলাটির নাম দেওয়া হয় ‘চেয়াভা ফলস’ (Cheyava Falls)। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা যায়, এটি জৈব যৌগে পূর্ণ, এর ভেতর দিয়ে একসময় পানি প্রবাহিত হয়েছিল, এবং এতে ছোপ ছোপ দাগ আছে—যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই বিক্রিয়াগুলো প্রাচীন জীবাণুর শক্তি উৎপাদনের উৎস হতে পারে।
সম্প্রতি ‘নেচার’ (Nature) জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় নাসা জানায়, মঙ্গলের দুইটি কাছাকাছি স্থানে পাওয়া আরও কিছু শিলা নমুনার বিশ্লেষণ তাঁদের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এক বছর ধরে বিশ্লেষণ শেষে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি এখন পর্যন্ত মঙ্গলে জীবনের সবচেয়ে স্পষ্ট চিহ্ন হতে পারে—যা সত্যিই অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর।”
২০২১ সালে মঙ্গলে অবতরণের পর থেকে পারসিভিয়ারেন্স রোভার ৩০ মাইল বিস্তৃত জেজেরো ক্রেটারজুড়ে নমুনা সংগ্রহ করে আসছে। এর SHERLOC যন্ত্রের স্ক্যান দেখায়, শিলাগুলিতে রয়েছে কার্বনভিত্তিক অণু, লালচে হেমাটাইটের ব্যান্ড এবং লোহা ও ফসফেটের দাগ।
গবেষক মাইকেল টাইস বলেন, “ব্রাইট অ্যাঞ্জেল অঞ্চলে প্রবেশের পর আমরা বুঝতে পারি, এখানকার শিলাগুলো একেবারেই আলাদা। এগুলোতে এমন রসায়নিক চক্রের ইঙ্গিত মেলে, যা পৃথিবীতে জীবেরা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সহজ, কিন্তু শুধুমাত্র ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় নয়।”
নাসার ঘোষণায় আরও জানা গেছে, স্যাফায়ার ক্যানিয়ন ও ম্যাসনিক টেম্পল নামের দুটি স্থানে পাওয়া মাটিতে রয়েছে ভিভিয়ানাইট (লোহা-ফসফেট) এবং গ্রেইগাইট (লোহা-সালফাইড) নামের খনিজ।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, কাদামাটি ও জৈব পদার্থের বিক্রিয়া থেকেই এই খনিজের সৃষ্টি। শিলার ভেতরে যেভাবে এই উপাদানগুলো বিন্যস্ত, তা জীববৈজ্ঞানিক উৎসের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
টাইস বলেন, “শুধু খনিজ নয়, এগুলোর বিন্যাসও বলে দিচ্ছে—এগুলো সম্ভবত লোহা ও সালফারের রেডক্স সাইক্লিং থেকে তৈরি, যেখানে পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মানে, মঙ্গলে হয়তো একই ধরনের প্রক্রিয়া ঘটেছিল।”
এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি
তবে এসব গঠন জৈব না অজৈব প্রক্রিয়ার ফল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে শুধুমাত্র পৃথিবীর পরীক্ষাগারে। সেই বিশ্লেষণের জন্য পারসিভিয়ারেন্সের সংগৃহীত নমুনা পৃথিবীতে আনা জরুরি।
মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী, নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) ‘মার্স স্যাম্পল রিটার্ন মিশন’-এর অংশ হিসেবে ২০৩৩ সালে বিশেষ রকেটযান দিয়ে এই নমুনা ফিরিয়ে আনার কথা ছিল।
কিন্তু অতিরিক্ত ব্যয় ও সময়ক্ষেপণের কারণে প্রকল্পটি বর্তমানে ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনার মধ্যেও এটি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, চীন ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২৮ সালের মধ্যেই নিজেদের মঙ্গল নমুনা সংগ্রহ মিশন চালু করবে।
আশার আলো রাখছেন নাসা প্রধান
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি বলেন, “রাষ্ট্রপতি মহাকাশ বিষয়টিতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমি নিয়মিত তাঁকে আপডেট দিই। যদি কোনো অর্থসংক্রান্ত সমস্যা হয়, আমি নিশ্চিত—তিনি আমাদের সমর্থন দেবেন।”
নাসার এই নতুন আবিষ্কার মঙ্গল গ্রহে একসময় প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে। এখন সবার চোখ—কখন পৃথিবীতে আনা হবে সেই নমুনা।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।