সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে মানিকগঞ্জের অধিকাংশ কল-কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হলেও মুন্নু ফেব্রিক্সের শ্রমিকদের এখনও বেতন পরিশোধ করা হয়নি। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে নামমাত্র বোনাসের টাকা পরিশোধ করে মুন্নু ফেব্রিক্স কর্তৃপক্ষ। সামান্য এই টাকা দিয়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করবে সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন শ্রমিকরা।
বুধবার (০৪ জুন) মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের মুন্নু সিটি এলাকায় মুন্নু ফেব্রিক্স কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা যায়।
শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে সব কল-কারখানায় বেতন বোনাসের টাকা পরিশোধ করা হলেও মুন্নু ফেব্রিক্স সেটা করেনি। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে সকাল থেকে আন্দোলন করে বোনাসের টাকা পেয়েছেন তারা। বেতনের টাকা না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন করা কষ্টকর হবে বলেও জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্নু ফেব্রিক্সের কারখানায় তিনটি সেকশনে ৬৮৫ জন শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিকের অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। অল্প কিছু শ্রমিক দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা থেকে এসে এখানে কাজ করেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এগিয়ে আসেন কারখানাটির এজিএম (এডমিন) মো. বাবুল হোসেন। এই প্রতিবেদকের সামনে তিনি এক নারী শ্রমিককে বেতন বোনাস সম্পর্কে বলতে বলেন। তখন ওই নারী শ্রমিক মাহেলা আক্তার বলেন, ১৫ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করি। বেতন পাই মাত্র ৮ হাজার ৮০০ টাকা। ঈদের আগে বেতন পাইনি। তবে ৩ হাজার ৬০০ টাকা বোনাস পেয়েছি।
এত অল্প টাকা দিয়ে ঈদ পালন করবেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বারবার বেতন চেয়েছি। না দিলে তো আমাদের কিছু করার নাই। ঈদে মেয়ে, মেয়ের জামাই আসবে। এছাড়া আমরা পরিবারে চার সদস্য আছি। এই টাকা দিয়ে কীভাবে ঈদ পালন করবো সেটা নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি।
কারখানাটির মেকানিক্যাল অপারেটর হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে এখানে কাজ করি। বেতন পাই ১৫ হাজার টাকা। ঈদে কোন শ্রমিককেই বেতন দেয়নি, শুধু বোনাস দিয়েছে। আমি ৬ হাজার টাকা বোনাস পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে কীভাবে ঈদ করবো বুঝতেছি না।
ফরহান নামের আরেক শ্রমিক জানান, ঈদে বেতন পাননি, নাম মাত্র কিছু বোনাস পেয়েছেন তিনি। ঈদের আগে বেতন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
আমজাদ হোসেন, মো. গিয়াস উদ্দিন, হাসনা বেগমসহ আরো অনেক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারাও একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঈদের আগে বেতন না দেয়াকে অমানবিক বলে দাবি করেন তারা। শ্রমিকরা বলেন, বোনাসের সামান্য এই টাকা দিয়ে কি ঈদ করা যায়? তারা তো ঠিকই আরাম আয়েশ করবে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে ঈদ পালন করবো সেটা মালিকরা একবারও ভাবলো না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানাটির এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিকরা তো প্রতি মাসে মাসে বেতন পায়, শুধু ঈদের আগে তাদের বেতন দেয়া হয়নি। আর আমার মতো কর্মকর্তাদের বেশ কয়েক মাস ধরেই বেতন বন্ধ রয়েছে। পরিবারের কাছে আমরা কীভাবে মুখ দেখাবো সেটাই বুঝতেছি না। ঈদের সামনে স্ত্রী-সন্তানের কাছে লজ্জায় পড়ে গেছি।
এ বিষয়ে মুন্নু ফেব্রিক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিউল ইসলাম অর্কের সাথে যোগাযোরে চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে এজিএম মো. বাবুল হোসেন বলেন, আমরা সবসময়ই মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করি। এবার মাসের শুরুতে ঈদ হওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা না হলেও বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা এটা মেনে নিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কলখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মুন্নু ফ্রেব্রিক্স কর্তৃপক্ষ ঈদের আগেই বোনাস এবং মে মাসের বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ ৪ জুন তারিখে বোনাস পরিশোধ করা হলেও বেতন পরিশোধ করা হয়নি। আগামীকাল কারখানা ছুটির আগেই মে মাসের বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।