লাইফস্টাইল ডেস্ক : সকালের শুরুটা যেমন হবে, সারা দিনের শরীর ও মনের অবস্থাও অনেকটা তেমনই হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় আমরা এমন কিছু অভ্যাস মেনে চলি বা এমন কিছু ভুল করে ফেলি, যার ফলে দিনটা তো খারাপ হয়ই, সঙ্গে বাড়ে গ্যাস্ট্রিক, গ্যাস, কিংবা অ্যাসিডিটির সমস্যাও। এ ধরনের সমস্যা শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই সকালে এমন কিছু ভুল এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো আমাদের হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। নিচে এমন পাঁচটি সাধারণ ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো এড়াতে পারলেই অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব অতিরিক্ত গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা।
প্রথমত, অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চা বা কফি পান করেন। বিশেষ করে চা-পান যেন এক ধরনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু খালি পেটে চা বা কফি পান করলে পাকস্থলিতে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বুকজ্বালা, গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন খালি পেটে হজমে বাধা সৃষ্টি করে। তাছাড়া কফির ক্যাফেইন পাকস্থলিকে উত্তেজিত করে এবং হজমরস নিঃসরণকে অতিরিক্তভাবে উদ্দীপিত করে, যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্তত এক গ্লাস গরম পানি খেয়ে, তারপর হালকা কিছু খেয়ে তবেই চা-কফি খাওয়া উচিত।
দ্বিতীয় ভুলটি হলো, সকালে ভারী বা ঝালমশলাযুক্ত খাবার খাওয়া। অনেকেই সকালে পুরি-সবজি, তেলে ভাজা পরোটা, কিংবা হেভি মাংস জাতীয় কিছু খেয়ে ফেলেন। সকালে পাকস্থলি অনেকটাই সংবেদনশীল থাকে। এসময় হঠাৎ ভারী খাবার খেলে হজমে সমস্যা দেখা দেয় এবং পাকস্থলিতে গ্যাস জমে। আবার অতিরিক্ত তেল-মশলা খাবার অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বুকজ্বালা, পেট ফুলে থাকা বা টয়লেট সমস্যা দেখা দেয়। বরং হালকা প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত নাশতা, যেমন- ওটস, সেদ্ধ ডিম, কলা বা স্যুপ জাতীয় খাবার খাওয়াই উচিত।
তৃতীয় যে ভুলটি আমরা করে থাকি, তা হলো সকালে নিয়মিত সময়মতো টয়লেট না যাওয়া বা এড়িয়ে যাওয়া। অনেকেই ব্যস্ততার কারণে কিংবা আলসেমির বশে সকালে টয়লেট যান না বা দেরিতে যান। এতে শরীরের মল-মূত্র সময়মতো নির্গত না হওয়ায় তা পাকস্থলিতে গ্যাস তৈরি করে। নিয়মিত সকালে নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেট অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এতে শরীরের বর্জ্য অপসারণ ঠিকভাবে হয় এবং হজমতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক থাকে। নিয়মিত টয়লেট না গেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস দুই-ই বাড়ে।
চতুর্থ ভুলটি হলো, সকালে একেবারেই কিছু না খেয়ে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা। অনেকে হয়ত ব্যায়াম করতে যান, আবার কেউ হয়তো ডায়েট করার উদ্দেশ্যে ব্রেকফাস্ট বাদ দেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে পাকস্থলির অ্যাসিড নিঃসরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এতে করে অ্যাসিডিটি, গ্যাস ও আলসারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এই অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু হালকা খাবার খাওয়া উচিত, যাতে পাকস্থলির অ্যাসিড নিঃসরণ স্বাভাবিক থাকে।
পঞ্চম ভুলটি হলো, সকালে পর্যাপ্ত পানি না পান করা। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করাও ভুলে যান। অথচ দীর্ঘ রাত্রিকালীন উপবাসের পর শরীর অনেকটা পানিশূন্য থাকে। সকালে পানি না খেলে হজমপ্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যার ফলে খাবার হজম হতে দেরি হয় এবং পাকস্থলিতে গ্যাস জমে। গরম পানি বা সাধারণ পানিই হোক, সকালে অন্তত এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করা উচিত। এতে হজমে সহায়ক উৎসেচক নিঃসরণ বাড়ে এবং শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়।
সবশেষে বলা যায়, আমাদের প্রতিদিনকার অভ্যাসই গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সকালের সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের কিছু ভুল অভ্যাস আমাদের সারা দিনের পেটের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। তাই যারা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচিত এই পাঁচটি সাধারণ ভুল পরিহার করা। দিনের শুরু যদি ঠিকভাবে হয়, তাহলে হজমও ঠিক থাকবে এবং সারাদিন শরীর থাকবে চনমনে ও ফুরফুরে। শরীরকে ভালো রাখতে হলে সকালে একটু বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। এসব ছোট ছোট পরিবর্তনই দীর্ঘমেয়াদে বড় সুফল বয়ে আনতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।