লাইফস্টাইল ডেস্ক : বেড়েছে মশার উপদ্রপ। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে মশাবাহিত নানান রোগও। এর মধ্যে দিন দিন বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এছাড়াও একটি সাধারণ সমস্যা সবারই হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে মশা কামড়ানোর স্থানে চুলকানি হওয়া।
নিউ ইয়র্কের স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ডার্মাটোলজিস্ট টারা এল. কফম্যান বলেন, ‘চুলকালে হিস্টামিন নিঃসরিত হয়, যার ফলে আরো বেশি চুলকায়। ওখানে ফুলেও যায় এবং নিরাময় বিলম্বিত হয়।’
হিস্টামিন হলো এমন একটি উপাদান যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম কোনো অ্যালার্জেনের প্রতি প্রতিক্রিয়া স্বরূপ নিঃসরণ করে, যেমন- মশার লালা। এই হিস্টামিনের কারণে মশার কামড়ের স্থানে লাল হয়, ফুলে যায় ও চুলকায়। আপনাকে মনে রাখতে হবে, চুলকিয়ে চুলকানি দূর করা যায় না।
মশার কামড় জনিত চুলকানি ও ফোলা এড়াতে যা করবেন
>> মেন্টেল বলেন, ‘মশার কামড়ের স্থানে গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দিলে চুলকানিকে উপেক্ষা করা সহজ হয়। মূলত গরম বা ঠাণ্ডা সেঁকে যে অনুভূতি পাওয়া যায় তা চুলকানি থেকে মনকে সরিয়ে ফেলে, যার ফলে চুলকানির প্রবণতা কমে আসে। যে সেঁকই দেন না কেন, অত্যধিক গরম বা ঠাণ্ডা নয়- কারণ ত্বক পুড়ে যাওয়া বা উক্ত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গরম পানিতে এক টুকরো কাপড় ভিজিয়ে মশার কামড়ের স্থানে ৩-৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে প্রয়োজনানুসারে রিপিট করুন। অথবা বরফ টুকরো তোয়ালে/কাপড়ে পেঁচিয়ে মশার কামড়ের স্থানে ১০ মিনিট রেখে দিন।
>> মশার কামড়ের স্থানে চুলকালে চুলকানি উপশম করতে ক্যালামাইন লোশন বা অন্যান্য চুলকানির ক্রিম প্রয়োগ করতে পারেন। জার্মানির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ডার্মাফার্মের মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সেসের প্রধান টিম মেন্টেল বলেন, ‘অধিকাংশ চুলকানির লোশন ও ক্রিম শীতলদায়ক অনুভূতি তৈরি করে যা সাময়িকের জন্য চুলকানি ও অস্বস্তি দূর করে।’
ক্যালামাইন লোশন ছাড়াও হাইড্রোকরটিসোন ক্রিম ও অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। মেন্টেল বলেন, ‘ফোলা ও চুলকানি কমাতে হাইড্রোকরটিসোন ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন, তবে ত্বকে ক্ষত থাকলে এটা ব্যবহার করা উচিত নয়।’ চুলকাতে চুলকাতে ত্বক ছিঁড়ে গেলে এই স্টেরয়েড ক্রিম এড়িয়ে চলুন, কারণ শরীরে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম শরীরে নিঃসরিত হিস্টামিনকে ব্যর্থ করে, যার ফলে চুলকানি কমে। তবে এই ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো, কারণ কিছুক্ষেত্রে উদ্বেগজনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
>> অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম ব্যবহার করতে না চাইলে অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। তবে পোকামাকড় জনিত চুলকানিতে ক্রিমই তুলনামূলক ভালো কাজ করে এবং এতে ঘুমাচ্ছন্নতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। ট্যাবলেট সেবন করলে ঘুমে আচ্ছন্ন হতে পারেন। ডা. কফম্যান বলেন, ‘অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট চুলকানি কমাতে পারে এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পাওয়া যায়।’ মশার কামড় জনিত চুলকানি প্রশমনে এসব অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন- ডাইফেনহাইড্রামিন, লোরাটাডিন ও সেটিরিজিন।
মশার কামড়ে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
অধিকাংশ মশার কামড়ই দুশ্চিন্তার কিছু নয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠে। কিন্তু ডা. কফম্যানের মতে, ‘জ্বর আসলে, ফ্লু সদৃশ উপসর্গ দেখা দিলে এবং ফোলা বা লালতা বাড়তেই থাকলে এটা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এসময় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’ জ্বর বা ফ্লু সদৃশ উপসর্গ মশাবাহিত রোগের লক্ষণও হতে পারে।
যেহেতু দেশে এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, তাই এর লক্ষণগুলো জেনে রাখা ভালো। মৃদু ডেঙ্গুর উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো- জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, র্যাশ ওঠা বা ছোপ ছোপ দাগ, বমিভাব ও বমি। তীব্র পেট ব্যথা, ঘনঘন বমি (২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩ বার), নাক বা মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি বা মলে রক্ত, শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়া, প্রচণ্ড দুর্বলতা ও চেতনা হারানো হলো ভয়ানক ডেঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এসব লক্ষণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
সূত্র: ইনসাইডার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।