আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া ও প্রকৃতি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের খেসারত দিতে হচ্ছে কম-বেশি কম দেশকে। বাদ পড়ছে না উন্নত বিশ্বও। এই সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে, সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবার কারণে চীনের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে অর্ধেকই ডুবে যাওয়ার হুমকিতে। বন্যার ঝুঁকিতে আছে লাখো মানুষ। এখানে বলে রাখা ভালো, কার্বন নিঃসরণে চীন বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি।
গোটা চীনের ওপর উপগ্রহের মাধ্যমে পরিচালিত ভূমি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে শুক্রবার এক প্রতিবেদন দিয়েছে সায়েন্স জার্নাল, সেখানেই বেরিয়ে এসেছে এমন সব ভয়াবহ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শহরগুলো সময়ের সঙ্গে বেড়ে উঠলেও, ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবার কারণে অর্ধেকের বেশি বড় শহর ডুবে যাচ্ছে। এতে লাখো মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে আছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, প্রতি বছর চীনের বড় বড় নগরগুলোর ভূমির ৪৫ শতাংশ তিন মিলিমিটারের বেশি দ্রুত ডুবে যাচ্ছে। এরমধ্যে ১৬ শতাংশ প্রতি বছর ১০ মিলিমিটারেরও বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। এই পরিমাণ ছোট মনে হতে পারে, কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, চীনের নগর উপকূলীয় ভূমির এক চতুর্থাংশ ১০০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
গবেষণাপত্রটি পর্যালোচনাকারী জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পূর্ব অ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট নিকোলস বলেন, শুধুমাত্র সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবার কারণেই নয়, আধুনিক নগরায়ণের প্রভাবে এটি ঘটছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। শুধু চীন নয়, এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে গোটা বিশ্বজুড়েই। এককভাবে এখন আর জলবায়ু পরিবর্তনের উপর দোষ দেয়া যাবে না, নগরায়ণের প্রভাবও কম নয়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবার কারণেই নয়, শহরগুলোর দালানের ভার, শহুরে জলাধার থেকে পাম্প করে পানি বের করে ফেলা, তেল ও কয়লার জন্য জমি খননের কারণে ভূমি দেবে যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, ফলে ভূমিও দেবে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটি ও শিলা ভেঙ্গে পড়তে পারে।
সাউথ চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির গবেষক দলের নেতৃত্ব দেয়া বিজ্ঞানী আও জুরুই বলেন, চীনে এরই মধ্যে শহুরে জনসংখ্যা ৯০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে ভূমি দেবে গেলে অনুমানের চেয়ে বেশি মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। উপকূলীয় এলাকাগুলো সমুদ্রের নিচে হারিয়ে যাবে এবং সেখানের বসতিগুলো বন্যার ঝুঁকিতে পারবে।
শহুরে ভূমি দেবে যাবার কারণে প্রতি বছর চীনকে গচ্চা দিতে হচ্ছে ১০৪ কোটি টাকারও বেশি। এমন তথ্য দিয়ে রবার্ট নিকোলস জানান, চীনের শহরগুলো মধ্যে বেইজিং দ্রুত গতিতে দেবে যাচ্ছে। এরপরই রয়েছে তিয়ানজিন শহর। এই শহরে ১৫ লাখ মানুষ রয়েছে। গত বছর তিয়ানজিনে বড় ধরনের ভূমিধ্বসের পর প্রায় তিন হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে হয়েছিলো। এই শহরটির ভূমিও দ্রুত দেবে যাচ্ছে।
চীনের অনেক পুরানো কয়লা এলাকা রয়েছে। খনি থেকে অতিরিক্ত কয়লা উত্তোলনের কারণে এসব এলাকা প্রায় দেবে গিয়ে ভূমিধসের সৃষ্টি করে। ভূমিধস ঠেকার মাটির ভেতরে কংক্রিটের পিলার বসাতে হচ্ছে। কয়লা এলাকায় দুর্ঘটনায় প্রতি বছরই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আবার এই কয়লা শিল্পে ব্যবহারের কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ করছে, যাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসাবে দেখা হচ্ছে।
এমন ধরনের সমস্যা চীন ছাড়াও বহু দেশেও আছে। দ্রুত গতিতে শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সব দেশেই আবহাওয়া, মাটি ও পানি নিয়ে ঝুঁকিতে আছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক আলাদা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার ভূমি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার বড় অংশ এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।