সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই তৃতীয় শ্রেণির সমপর্যায়ের গ্রেডের পদগুলোতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্যতা এইচএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত। পদের গ্রেডভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস, যোগ্যতা, পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ জানিয়ে লিখেছেন সাজিদ মাহমুদ
গ্রেডভিত্তিক পদের শ্রেণিবিন্যাস: জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী ১১তম থেকে ১৬তম গ্রেডের পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণির পদ ধরা হয়। এসব গ্রেডের মধ্যে ১১তম গ্রেডের পদগুলো হচ্ছে তুলনামূলক জ্যেষ্ঠ। প্রতিষ্ঠানভেদে ১১তম গ্রেডের পদগুলোর মধ্যে আছে জুনিয়র অফিসার, জুনিয়র প্রশাসন সহকারী, জুনিয়র হিসাব সহকারী, হিসাবরক্ষক। বেতন স্কেল ১২৫০০-৩০২৩০ টাকা থেকে শুরু।
১২তম গ্রেডে ট্রেন এক্সামিনার, ট্রেন কন্ট্রোলার বা সমজাতীয় পদ; প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১১,৩০০-২৭,৩০০ টাকা। ১৩তম গ্রেডে কম্পিউটার অপারেটর, প্রধান সহকারী, স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী/উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, হিসাব সহকারী, নিরীক্ষা সহকারী, বৈজ্ঞানিক সহকারী বা সমজাতীয় পদ; প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১১,০০০-২৬৫৯০ টাকা। ১৪তম গ্রেডে সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ট্রাফিক অ্যাপ্রেন্টিস, জুনিয়র মাঠ সহকারী, উচ্চমান সহকারী কাম ক্যাশিয়ার, স্টেনোটাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর বা সমজাতীয় পদ; প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১০,২০০-২৪,৬৮০ টাকা। ১৫তম গ্রেডে প্রশিক্ষক, ড্রাফটসম্যান, অফসেট প্রিন্টি অপারেটর বা সমজাতীয় পদ; প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ৯,৭০০-২৩,৪৯০ টাকা।
১৬তম গ্রেডে ইউনিয়ন সমাজকর্মী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, জুনিয়র ফিল্ড সহকারী, স্টোরকিপার, গুদামরক্ষক, ড্রাইভার, রেকর্ডকিপার, টেলিফোন অপারেটর, টিকিট ক্লার্ক, মাঠ সংগঠক বা সমজাতীয় পদ; বেতন স্কেল ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা থেকে শুরু। সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির পদগুলোতে প্রতিষ্ঠান ও কাজের গুরুত্বভেদে পদ ও বেতন গ্রেড আংশিক বা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সুযোগ: সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির সমপর্যায়ের গ্রেডের পদগুলোতে সবচেয়ে বেশি লোকবল নিয়োজিত থাকেন। তাই বেশির ভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসব গ্রেডের পদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুসারে তৃতীয় শ্রেণির পদগুলোতে সবচেয়ে বেশি কর্মী নিয়োজিত আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুযায়ী মূলত তৃতীয় শ্রেণির পদের কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি। মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সব ধরনের সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী, রাজস্ব বোর্ডের দপ্তরসমূহ, অডিট বিভাগ, কাস্টম দপ্তর, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগ, বিভিন্ন কমিশন, কর্পোরেশন, বিভিন্ন বোর্ডসমূহ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন অথরিটি, আইন ও বিচার বিভাগসমূহের সব ধরনের অফিস, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয় তৃতীয় শ্রেণির পদে। আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও অন্যান্য কলেজসমূহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানেও বড় ধরনের জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় তৃতীয় শ্রেণির পদগুলোতে।
যোগ্যতা: তৃতীয় শ্রেণির (১১তম থেকে ১৬তম গ্রেড) পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মূলত স্নাতক থেকে এইচএসসি বা সমমান যোগ্যতা চাওয়া হয়।
১১তম, ১২তম ও ১৩তম গ্রেডের পদের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর বা সমমানের পাস চাওয়া হয়। তবে তা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও পদের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানভেদে পদভিত্তিক বিষয়ের ডিগ্রির কথাও উল্লেখ করা হয় অনেক সময়। যেমন—হিসাবসংক্রান্ত কোনো পদের জন্য বাণিজ্য বিভাগের ডিগ্রি চাওয়া হয়। আবার কারিগরিসংশ্লিষ্ট পদের ক্ষেত্রে কারিগরি বিষয়ে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। তবে সাচিবিক বা করণিক সব পদের বেলাতেই কম্পিউটার ও এমএস অফিসসংক্রান্ত কাজ জানা বাধ্যতামূলক। পদভেদে টাইপিং গতির ন্যূনতম দক্ষতাও চাওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে।
পরীক্ষা পদ্ধতির ধরন: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নিয়োগবিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান ও পদভেদে লিখিত, মৌখিক এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক এই তিন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই প্রথমে এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষা নেয়। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সংক্ষিপ্ত পদ্ধতির রচনামূলক বা পূর্ণ রচনামূলক পরীক্ষাও নেয়। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও পরীক্ষা নেয়।
নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি: তৃতীয় শ্রেণির সমপর্যায়ের গ্রেডের পদগুলোর গত পাঁচ বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ৭০ নম্বরের এক ঘণ্টার পরীক্ষা নিয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আবার দেড় ঘণ্টার রচনামূলক পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নিয়েছে। দুই পদ্ধতির ক্ষেত্রেই প্রশ্নের প্রাধান্য পেয়েছে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ জ্ঞান, সমসাময়িক বিষয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আইসিটি ও পদভিত্তিক বিষয়। প্রশ্নের প্যাটার্ন অনুসারে দুই পদ্ধতির জন্যই বাংলায় সাহিত্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস থেকে এবং ব্যাকরণে ভাষা, বর্ণের ব্যবহার, ধ্বনি ও ধ্বনিতত্ত্ব, বিরাম-ছেদচিহ্ন, পদ প্রকরণ, সন্ধি, কারক, বিভক্তি, সমাস, সমার্থক ও বিপরীত ও পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা, প্রবাদ প্রবচনসহ নানা বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। ইংরেজিতে আর্টিকল, পার্টস অব স্পিচ, রাইট ফর্ম অব ভার্বস, ট্রান্সফরমেশন, ট্রান্সলেশন, নাম্বার, ফিল ইন দ্য ব্ল্যাংক, ফ্রেইজ অ্যান্ড ইডিয়ম, ন্যারেশনসহ বেশ কিছু বিষয়ে পড়তে হবে। পাটিগণিতে সরল, সুদকষা, গড় নির্ণয়, শতংাশ, ভগ্নাংশ, লসাগু, গসাগু, ধারা নির্ণয়, সূত্র ও নিয়মাবলি অধ্যায় এবং বীজগণিতে সূত্র ও নিয়মাবলি, উৎপাদক, বর্গ ও ঘনত্বসহ দরকারি অধ্যায়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সাধারণ জ্ঞানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, সমসাময়িক বিষয়াদি, আইসিটি ও পদভিত্তিক বিষয়গুলোতে ভালো চর্চা রাখতে হবে। প্রস্তুতির জন্য নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে পদভেদে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইগুলোর ওপর মৌলিক জ্ঞান বাড়াতে হবে। পাঠ্য বই ছাড়াও সাধারণ জ্ঞানের জন্য সংবাদপত্র, খবর, জার্নাল, মাসিক ও সাময়িক পত্রিকায় নিয়মিত চোখ রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রকাশনী প্রকাশিত তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগ প্রস্তুতি সহায়ক বইও বাজারে পাওয়া যায়। ভালো প্রস্তুতির জন্য এসব বইও সংগ্রহ করতে পারেন।
পরামর্শ: বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির সমপর্যায়ের গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা জানান, এসব পদে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কম্পিউটারে কাজের দক্ষতা ও ক্ষেত্রবিশেষে কাজভিত্তিক যোগ্যতা থাকাটা খুবই জরুরি। তাই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগে থেকেই। সঙ্গে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট প্রশিক্ষণ সনদ বা কম্পিউটারে অফিস প্যাকেজে কাজ জানা থাকতে হবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।