আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বে শক্তি ও প্রভাবের পরিমাপ কোনো সহজ কাজ নয়। একেক সময় একেক দেশ সামরিক, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কারণে উঠে আসে আলোচনায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইউএস নিউজ প্রতি বছর একটি তালিকা প্রকাশ করে যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয় নানা সূচকের ভিত্তিতে। এই তালিকাই পরিচিত বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025 নামে, যেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তোলে।
Table of Contents
এই তালিকায় শুধু সামরিক শক্তিই নয়, বিবেচনায় আনা হয় অর্থনৈতিক বল, কূটনৈতিক যোগাযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণে ভূমিকা। চলুন, বিশ্লেষণ করে দেখি কে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এবারের তালিকায় এবং কেন এই তালিকা এত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025: কীভাবে তৈরি হয় এই র্যাঙ্কিং?
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025 শুধু একটুখানি সামরিক সক্ষমতা নয়, বরং একাধিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়। ইউএস নিউজ-এর ‘Power Subranking’ মূলত ছয়টি মূল সূচক বিবেচনায় নেয়:
- বিশ্ব নেতৃত্বে ভূমিকা (Leadership)
- অর্থনৈতিক প্রভাব (Economic Influence)
- শক্তিশালী রপ্তানি খাত (Strong International Alliances)
- রাজনৈতিক প্রভাব (Political Influence)
- আন্তর্জাতিক জোট ও মিত্রতা (Global Alliances)
- সামরিক ক্ষমতা (Military Power)
এই ছয়টি বিষয়কে ঘিরেই ঠিক করা হয় কোন দেশ কতটা ক্ষমতাবান। প্রতিটি সূচকের পেছনে থাকে গবেষণা, জনমত জরিপ এবং পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ। এটি কোনো সাধারণ তালিকা নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান চিত্রকে তুলে ধরার এক নিখুঁত আয়না।
২০২৫ সালের তালিকায় শীর্ষ ১০টি দেশ কারা এবং কেন?
এবার দেখা যাক বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025-এ শীর্ষস্থান দখল করা দেশগুলো কারা এবং তারা কী কারণে এতটা শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
১. যুক্তরাষ্ট্র (United States)
সবদিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিশাল সামরিক বাজেট, জাতিসংঘ ও ন্যাটোর মতো সংস্থায় নেতৃত্ব, প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে দেশটি।
২. চীন (China)
দ্রুত উন্নত হওয়া অর্থনীতি, বিশাল জনসংখ্যা এবং দিনদিন বেড়ে চলা সামরিক বাজেট চীনকে শীর্ষে তুলেছে। কূটনীতিতে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে চীন অনেক দেশকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে এনেছে।
৩. রাশিয়া (Russia)
যুদ্ধ নীতিতে প্রগাঢ়, কূটনীতিতে জটিল এবং সামরিক শক্তিতে দুর্দান্ত এক দেশ রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে টানাপড়েন দেশটির অবস্থানকে নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
৪. যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
ব্রেক্সিটের পরও যুক্তরাজ্য তার ঐতিহ্য, সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তির কারণে তালিকার উপরের দিকে রয়ে গেছে।
৫. জার্মানি (Germany)
অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের হৃৎপিণ্ড বলা হয় জার্মানিকে। শক্তিশালী রপ্তানি খাত এবং শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী অগ্রগতির জন্য তালিকায় শীর্ষে।
৬. ফ্রান্স (France)
পারমাণবিক অস্ত্র, জাতিসংঘে প্রভাবশালী ভূমিকা এবং আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি—সব মিলিয়ে ফ্রান্সের অবস্থান দৃঢ়।
৭. জাপান (Japan)
বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিনির্ভর দেশ জাপান। যদিও সামরিক দিক কিছুটা সীমিত, তবে অর্থনীতিতে এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর দেশ।
৮. ইসরায়েল (Israel)
সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক এবং মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত অবস্থানের কারণে ইসরায়েল সবসময় আলোচনায়।
৯. দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)
টেকনোলজি, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক জোটে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশটিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
১০. ইতালি (Italy)
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হওয়ায় এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকার কারণে শক্তিশালী দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থান: ৫০ দেশের তালিকায় উঠে আসার গল্প
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025-এ বাংলাদেশ যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। ৪৭তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের সামনে রয়েছে অনেক উন্নত দেশকেও পিছনে ফেলার সুযোগ।
কেন বাংলাদেশ জায়গা পেয়েছে এই তালিকায়?
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বিগত এক দশকে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রবৃদ্ধির ধারা। গার্মেন্টস, রেমিটেন্স ও কৃষিখাত এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: যদিও সমালোচনা রয়েছে, তবে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক ভালো।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন প্রকল্প: পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন—সবখানে দেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।
- সামরিক উন্নয়ন: সামরিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে।
এই সব কিছুর সম্মিলিত ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশ এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বরং বৈশ্বিক মঞ্চেও আলোচনায় রয়েছে।
তালিকা তৈরির পেছনের সত্য: ২০২৫ সালের তথ্য নাকি ২০২৪ সালের?
যদিও অনেকেই বলছেন, বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025 প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু ফ্যাক্টচেক সূত্রে জানা গেছে, ইউএস নিউজ এখনো ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেনি। তারা প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই তালিকা প্রকাশ করে থাকে, আর সর্বশেষ আপডেটটি ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ২০২৪ সালের মার্চ-মে মাসের জরিপের ভিত্তিতে।
অতএব, যে তালিকা নিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মিডিয়া এখন কথা বলছে, তা মূলত ২০২৪ সালের তালিকা। ২০২৫ সালের প্রকৃত তালিকা আমরা পেতে যাচ্ছি এ বছরের (২০২৫) সেপ্টেম্বর মাসে।
শক্তিশালী দেশের তালিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই ধরনের র্যাঙ্কিং শুধু প্রতিযোগিতার সূচক নয়, বরং এর মাধ্যমে বোঝা যায় কোন কোন দেশ বিশ্ব নীতিনির্ধারণে কতোটা প্রভাব ফেলছে। এটি বিনিয়োগ, কূটনীতি, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।
বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই তালিকায় স্থান পাওয়া মানে হলো বিশ্ব দরবারে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য এটি ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা 2025 শুধু সংখ্যার খেলা নয়—এটি প্রতিটি দেশের আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার প্রতিচ্ছবি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত, প্রতিটি দেশ একেকটি গল্প, একেকটি সংগ্রাম।
বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় উঠে আসা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। যদিও তালিকাটি ২০২৫ সালের নামে পরিচিত হলেও এটি ২০২৪ সালের জরিপের ভিত্তিতে তৈরি। আসন্ন সেপ্টেম্বর মাসে প্রকৃত তালিকা প্রকাশিত হলে দেখা যাবে বাংলাদেশের অবস্থান কতটা উন্নত হয়েছে।
এই তালিকা শুধু আমাদের গর্বিত করে না, বরং আমাদের আরও উন্নত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।