সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা ২০২৫”-এ বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে দুটি বিপরীতমুখী দাবি ভাইরাল হয়। কেউ বলছে বাংলাদেশ ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩তম থেকে ৪৭তম হয়েছে, আবার কেউ বলছে ৪০তম থেকে ৪৭তম স্থানে নেমে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, ইউএস নিউজ-এর সর্বশেষ তালিকাটি ২০২৪ সালের জরিপভিত্তিক, যা সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম, এবং এই তালিকায় ছিল মোট ৮৯টি দেশ। অন্যদিকে, দ্বিতীয় দাবির উৎস CEOWORLD নামের একটি ভিন্ন ওয়েবসাইটের আলাদা পদ্ধতির র্যাংকিং। দুইটি ভিন্ন উৎস ও ভিন্ন বছরের তালিকা মিলিয়ে তুলনা করা অনৈতিক ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত তথ্য যাচাই ছাড়া বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়িয়ে দেওয়া খুবই ক্ষতিকর, এবং তথ্য যাচাই এখন অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা ২০২৫: বিভ্রান্তি বনাম বাস্তবতা
বাংলাদেশ যখন কোনো আন্তর্জাতিক তালিকায় জায়গা করে নেয়, তখন জাতীয় গর্বে আমরা উচ্ছ্বসিত হই। তবে, সেই আনন্দ যদি বিভ্রান্তির উপর ভিত্তি করে হয়, তখন পরিস্থিতি হয়ে ওঠে জটিল। সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়েছে “বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকা ২০২৫”-এ বাংলাদেশের অবস্থান ঘিরে দুটি ভিন্নমত।
Table of Contents
অনেক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মাত্র ৭ মাসে বাংলাদেশ ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩তম থেকে ৪৭তম স্থানে উঠে এসেছে। এর উৎস হিসেবে US News-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে US News এমন কোনো তথ্য দেয়নি। তারা ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ তালিকা প্রকাশ করে, যার জরিপ হয়েছিল মার্চ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত। সেই জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পাওয়ার র্যাংকিংয়ে রয়েছে ৪৭তম এবং সামগ্রিকভাবে ৭১তম। এতে মোট ৮৯টি দেশ স্থান পেয়েছে।
অন্যদিকে, কিছু পোস্ট দাবি করে, বাংলাদেশ ৪০তম থেকে নেমে ৪৭তম হয়েছে। এই তথ্যের উৎস CEOWORLD নামের একটি ওয়েবসাইট, যারা ২০২৪ সালের এপ্রিলে ১৪২টি দেশের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি জরিপ ও সূচকের ভিত্তিতে তৈরি। ফলে US News-এর সঙ্গে এর তুলনা করা একেবারেই অনুপযুক্ত।
ইউএস নিউজ তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া
US News প্রতি বছর “Best Countries” নামক র্যাংকিং প্রকাশ করে। তারা জরিপ চালায় সারা বিশ্বের প্রায় ১৭,০০০ মানুষের উপর। পাওয়ার সাবর্যাংকিং তৈরি হয় ৬টি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে:
বিশ্ব নেতৃত্বে ভূমিকা
অর্থনৈতিক প্রভাব
সামরিক শক্তি
রাজনৈতিক প্রভাব
আন্তর্জাতিক জোট
রপ্তানি সক্ষমতা
এই সূচকগুলো বিশ্লেষণ করেই দেশের ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশের অবস্থান: সম্মানজনক অর্জন
বাংলাদেশ ২০২৪ সালের তালিকায় ৪৭তম স্থানে রয়েছে, যা একদিকে মধ্যম পর্যায়ের একটি অবস্থান হলেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এটি গর্বের। কারণ, পাকিস্তান, ভুটান বা মালদ্বীপের মতো দেশগুলো তালিকায় স্থানই পায়নি। শুধুমাত্র ভারত রয়েছে ১২তম স্থানে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় দেশকেও পেছনে ফেলেছে।
দুইটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্মের র্যাংকিংকে মিশিয়ে যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং জাতীয় অর্জনের প্রকৃত মূল্যায়নও অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। সঠিক তথ্য যাচাই না করে তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২০২৪ সালের ইউএস নিউজ অনুযায়ী শীর্ষ ৫০টি শক্তিশালী দেশের তালিকা
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, ইতালি, ইরান, কানাডা, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইউক্রেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, কাতার, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, মিসর, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, বেলজিয়াম, মেক্সিকো, ডেনমার্ক, গ্রিস, আর্জেন্টিনা, চেক প্রজাতন্ত্র, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডান, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া, কুয়েত, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল, রোমানিয়া, আলজেরিয়া, হাঙ্গেরি, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।