জুমবাংলা ডেস্ক : নিজের পাশাপাশি পরিবারের অন্য সবার ভাগ্য ফিরিয়েছেন ছাগল কাণ্ডে আলোচিত মো. মতিউর রহমান। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে নিজের নামে কোন সম্পত্তি না থাকলেও ভাইদের নামে আছে বিপুল সম্পত্তি। স্বজনদের দাবি, এলাকায় তেমন না আসলেও ভাই ও আত্মীয়স্বজনদের নানা উন্নয়ন করেছেন তিনি।
মুলাদী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের থানা রোডের বিলাসবহুল বাড়িটি ছাগল কাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছোট ভাই কাউয়ুম হাওলাদারের। দুই বছর আগে নিলামে প্রায় ২ কোটি টাকার বেশি দামে বাড়িটি কিনে নেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি মাহমুদ জান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাজাহান মাহমুদ বাদশা মিয়া পরিশোধ না করায় বাড়িটি নিলামে তোলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাড়িটি কাউয়ুম হাওলাদার কিনলেও কেউ থাকেন না।
কাজীরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে মতিউর রহমান সবার বড়। তার মেজো ভাই কাইয়ুম হাওলাদার ব্যবসা করেন। সবার ছোট নূর ইসলাম হাওলাদার বাড়ি থেকে সবকিছু দেখাশোনা করেন।
মতিউর রহমানের গ্রামে একটি দোতলা বাড়ি থাকলেও সেখানে সব সময় তালা ঝোলানো থাকে। তবে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত তিনতলা আব্দুল হাকিম হাওলাদার হামিদিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা ও দোতলা মসজিদ আছে। এছাড়া রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ ও তিনতলা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে হাওলাদার ফাউন্ডেশন নামের একটি তহবিল। যার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন মতিউরের চাচাতো ভাইয়েরা।
স্বজনদের দাবি, পারিবারিক সূত্রে মতিউর রহমান ২০ বিঘা জমি পেলেও তা দান করেছেন মসজিদ মাদ্রাসায়। নিজের নামে কোন জমি কেনেননি এলাকায়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়িতে তেমন আসেন না। সবশেষ ২০১৮ সালে মতিউর রহমানের বাবা আবদুল হাকিম হাওলাদারের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এমনকি ছাগল কাণ্ডে ভাইরাল মুশফিকুর রহমান ইফাতকেও চেনেন না তারা।
মতিউর রহমানের চাচাতো ভাই মাহমুদুন্নবী বলেন, মতিউর ভাই এলাকায় তেমন আসেন না। আমরা যারা আছি সবাই বাড়ি ঘরে থাকি মসজিদ মাদ্রাসা দেখাশোনা করি। মতিউর ভাই তার বাবার থেকে যত সম্পত্তি পেয়েছেন সবই মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেছেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমাদের সবাইকে দেখে শুনে আগলে রেখেছেন। সম্প্রতি ভাইকে নিয়ে যা শুরু হয়েছে এটা দুঃখজনক। ওনার মতো ভালো মানুষ হয় না।
মতিউর রহমানের আরেক চাচাতো ভাই ফখরুদ্দিন জানান, এই ছাগল কিনতে গিয়ে ভাইরাল মুশফিকুর রহমান ইফাতকে আমরা কেউ চিনি না। একে কোনদিন দেখি নাই। এমনিতেই মতিউর রহমান ভাই ভাবি তার সন্তান নিয়ে এলাকায় তেমন আসেন না। কিন্তু বর্তমানে যা শুরু হয়েছে এটা দুঃখজনক।
মতিউর রহমানকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের পর থেকে আলোচনা সমালোচনা চলছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয়রা জানান, মতিউরের যেসব অবৈধ সম্পদের খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে তার সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই করেননি তিনি। যেটুকু সম্পত্তি আছে তা করেছেন মতিউরের ভাইয়েরা। তবে কয়েক বছর আগে থেকে দ্বিতীয় বিয়ের গুঞ্জন উঠেছিল এলাকাজুড়ে।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জাকির হোসেন জমদ্দার বলেন, মতিউর রহমানের বাবা যখন চেয়ারম্যান ছিলেন সেই আমল থেকে আমি মেম্বারি করে আসছি। মতিউর রহমানের পরিবারের সবাইকে আমি চিনি। মতিউর এলাকায় তেমন কোন সম্পত্তি করেননি। তবে তার ভাইয়েরা করেছেন। সম্প্রতি ছাগল কেনা নিয়ে যা শুরু হয়েছে এসব দেখে আমরা অবাক। প্রচারিত সংবাদে মতিউরের যে এত সম্পদ জানানো হয়েছে এ বিষয়ে আমরা জানতাম না। তবে কয়েক বছর আগে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছিল মতিউর রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। কিন্তু এটা কতটুকু সত্য আমরা জানি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে অনার্স-মাস্টার্স আর এমবিএ করা মতিউর রহমানের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত কাজ করেন সেখানে। সর্বশেষ উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকেই ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল যোগ দেন কাস্টমস বিভাগে।
সূত্র ও ছবি : সময় নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।