জুমবাংলা ডেস্ক : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুন করতে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে ভারতে যান দুজন। মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাহাজী চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভিসা, টিকিট এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্র গুছিয়ে দেন এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে গ্রেপ্তারের পর শাহীনের বসুন্ধরা আবাসিকের ফ্ল্যাট থেকে তাদের দুজনের দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে তাদের ভারত যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই দুজনের ভিসার জন্য শাহীন ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি, রোগের প্রেসক্রিপশনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করেন। গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় এসে চিকিৎসা ভিসা পান মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। এরপর তাঁরা ঢাকা থেকে তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনা চলে যান। গত ২ মে শিমুল ভূঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনা মোতাবেক মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল কলকাতায় যান এবং নিউমার্কেট এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন।
এ দিকে মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ছয় দিনের পুলিশ রিমান্ডে জানিয়েছেন—মোস্তাফিজুর ও ফয়সালের সঙ্গে শিমুল ভূঁইয়া গত মার্চ মাসে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে বড় অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখান তিনি। শিমুল ভূঁইয়া তাদের দুজনকে একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য ভারতের কলকাতায় যেতে বলেন। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিটসহ সকল কাজ শিমুল ভূঁইয়া করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে টাকাও দেন।
জরুরিভাবে পাসপোর্ট করে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল গত ১৫ এপ্রিল খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন। তারা দুজনে আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরার এল ব্লকের ৩২ নম্বর রোডের ১৯২৯ নম্বর বাসায় ওঠেন। পরদিন মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের পিএস পরিচয়ধারী সিয়াম হোসেন নামে এক লোক ওই বাসায় যান। শাহীনের নির্দেশে দুজনকে নিয়ে ভারতীয় ভিসার জন্য ভিসা আবেদন কেন্দ্রে নিয়ে যান। শাহীন দ্রুত ভিসার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ওই দুজনকে জানান সিয়াম নামের ওই ব্যক্তি।
শাহীনের পিএস সিয়াম হোসেন তাদের (মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল) দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। সিয়াম তাদের (মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল) জানিয়েছিলেন যে, তাদের ভিসার জন্য শাহীন ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি, রোগের প্রেসক্রিপশনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করেছেন।
শাহীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২ মে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল কলকাতায় যান এবং মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ১০ মে নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্স নামের ওই বাসায় যান।
আনোয়ারুল আজীম আনার ওই বাসায় গেলে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জিহাদ, ফয়সাল, মোস্তাফিজসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অজ্ঞান করে হত্যা করে। লাশ গুম করার জন্য মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করে ফেলা হয়। ঘাতক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল কিলিং মিশন শেষ করে ১৯ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তারা আবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা শাহীনের ফ্ল্যাটে ওঠেন। পরে শিমুল ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হলে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল ওই বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন।
পুলিশ বলছে—পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। তবে তারা দুজনেই পাসপোর্ট রেখে যান শাহিনের বাসায়। পুলিশ তাদের পাসপোর্ট উদ্ধারের জন্য একটি জিডি করেন। গত ২৯ জুন শাহিনের বসুন্ধরার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনের পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। নতুন দুটি পাসপোর্টে তাদের ভারতে যাওয়ার হিস্ট্রি রয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার আসামি মোস্তাফিজুর রহমান অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে এমপি আনোয়ারুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।
মোস্তাফিজকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামির জবানবন্দি নেওয়া হয়।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ বলেন, ‘জবানবন্দি রেকর্ডের পর মোস্তাফিজুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন তাঁর কলকাতার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন। এই ঘটনায় কলকাতাতেও একটি মামলা করেছে সে দেশের পুলিশ। সেখানেও দুই আসামি গ্রেপ্তার রয়েছে। – আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।