দেশের হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। মার্চের শেষদিকে এসেও এখনো অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পাননি, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক চাপে এই বেতনপ্রাপ্তি অনেকের জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব দ্রুতই এই বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এমন আশ্বাস অনেকের জন্য কিছুটা স্বস্তির হলেও, নিশ্চিততার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মার্চ মাসের বেতন নিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি
মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় নজরদারিতে রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বেতনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে এবং তা চলতি সপ্তাহেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আগামী সপ্তাহেই শিক্ষক-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
Table of Contents
এই বিষয়ে মাউশির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হালনাগাদ তথ্য দিয়েছেন, তেমনি বেতনপ্রদানের দিকেও আশার আলো দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, মার্চ মাসে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৬০২ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ইএফটির মাধ্যমে বেতন দেওয়া হবে এবং এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল এর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরাপদ পদ্ধতিতে বেতন দেওয়া নিশ্চিত করতে ইএফটি পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এর ফলে, শিক্ষকরা আগের মতো ব্যাংকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বা কাগজপত্র ঘেঁটে বেতন তুলতে বাধ্য হচ্ছেন না।
ইএফটি পদ্ধতির কার্যকারিতা ও শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ইএফটি মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হলেও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছরের ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই পদ্ধতির ঘোষণা আসে এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে মাত্র ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী এই সুবিধা পান। পরবর্তীতে জানুয়ারি মাসে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার জন এবং পরবর্তী ধাপে আরো প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এই সুবিধা পান।
এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় শিক্ষক সমাজ কৃতজ্ঞ হলেও বিভিন্ন ধাপে যারা বেতন পেয়ে থাকেন না, তাদের মধ্যে ক্ষোভ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা এখনও মার্চ মাসের বেতন পাননি, তাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই বলেন, উৎসব বা ঈদের সময় যদি বেতন না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের পরিবারে চাপ বেড়ে যায়।
বেতনপ্রদান প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগিতা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষক ইএফটি পদ্ধতির প্রতি আস্থা রাখছেন। তারা মনে করেন, একবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বেতন সংক্রান্ত জটিলতা অনেকটাই কমে আসবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতি তাদের আবেদন, যেন বেতনপ্রদান প্রক্রিয়া আর বিলম্বিত না হয়।
ইএফটির মাধ্যমে বেতন দেওয়া কতটা নিরাপদ ও টেকসই?
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটি হলো এমন একটি ডিজিটাল পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সরাসরি ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। সরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে এবং এর কার্যকারিতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহারের উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং নিরাপদ। এটি যেমন শিক্ষক-কর্মচারীদের সময় ও শ্রম বাঁচায়, তেমনি দুর্নীতির সুযোগও কমিয়ে আনে। তবে সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন যথাযথ অবকাঠামো এবং সঠিক তথ্যভাণ্ডার।
ইএফটি চালু হওয়ায় আর্থিক লেনদেন আরও বেশি স্বচ্ছ ও ট্র্যাকযোগ্য হয়েছে। এখন শুধু সময়মতো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যথাযথ সময়ে অর্থ ছাড় করাই মূল চ্যালেঞ্জ। যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষভাবে মোকাবিলা করা যায়, তাহলে ইএফটি হবে শিক্ষাখাতে বেতন প্রদান ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত।
বিভিন্ন ধাপে বেতনপ্রদান: একটি নজর
১ম ধাপ
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ২০৯ জন শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন পান। এটি ছিল একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ।
২য় ধাপ
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন পান।
৩য় ধাপ
৬৭ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছেন।
৪র্থ ধাপ
৮৪ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী ফেব্রুয়ারির বেতন পেয়ে যান।
৫ম ধাপ
সর্বশেষ ধাপে সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষক দুই মাসের বেতন ও ঈদ উৎসব ভাতা পেয়েছেন।
শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা
যদিও ধাপে ধাপে বেতন প্রদান শুরু হয়েছে, তারপরও এখনো ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষক মার্চ মাসের বেতন পাননি। তারা আশা করছেন, দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং তাদের প্রাপ্য বেতন তারা হাতে পাবেন।
শিক্ষকদের দাবি, ইএফটি পদ্ধতি আরও বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়ন করে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসাথে ইএমআইএস সেলের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে যেন কোনো তথ্যগত বা কারিগরি ত্রুটি বেতনপ্রদানকে ব্যাহত না করে।
তারা আরও বলেন, বিশ্ববাজারের প্রভাব যেভাবে অন্যান্য পেশায় বেতন কাঠামোকে প্রভাবিত করে, তেমনি শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মার্চ মাসের বেতন নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি একটি রূঢ় বাস্তবতা তুলে ধরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা, যেন তারা দ্রুত, সঠিক ও স্বচ্ছভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
FAQs
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মার্চ মাসের বেতন কবে পাবেন?
বর্তমানে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহেই বেতন দেওয়া হতে পারে।
ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন দেওয়ার সুবিধা কী?
ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়, এতে সময়, কাগজপত্র ও ভোগান্তি কমে।
কতজন শিক্ষক মার্চ মাসের বেতন এখনো পাননি?
প্রায় ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষক মার্চ মাসের বেতন এখনো পাননি।
ইএমআইএস সেল কী কাজ করে?
ইএমআইএস সেল বেতন প্রদানের ডেটা প্রস্তুত করে ও ইএফটি কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
এই পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে কত সময় লাগবে?
ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হলেও দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।