জুমবাংলা ডেস্ক : টি-শার্টের হাতা দিয়ে কাঁদানে গ্যাসে জ্বলতে থাকা চোখ মুছছিলেন ২৫ বছর বয়সী মুগ্ধ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জোরে জোরে বলছিলেন, ‘ভাই, পানি লাগবে কারও, পানি?’ পানির বোতল বিলিয়ে দিচ্ছিলেন সবার মাঝে। কিন্তু এর মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কপালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর আত্মত্যাগের বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে। ১৮ জুলাইয়ের মুগ্ধের ঘটনাকেই মূল বিষয়বস্তু ধরে ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মুগ্ধের গোটা জীবনটাই তুলে আনা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসে যখন মুগ্ধর চোখ-মুখ জ্বালাপোড়া করছিল। তখনও ভিড়ের মধ্যে তিনি বিক্ষোভকারীদের পানির বোতল এগিয়ে দিচ্ছেলেন। এর মধ্যেই বিশ্রামের সময় কপালে গুলি লাগে।
কপালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মুগ্ধকে তাঁর বন্ধু এবং অন্য বিক্ষোভকারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) সিএনএনকে বলেন, ‘আমি শুধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম এবং কান্নায় ভেঙে পড়ি। ’
সিএনএন বলছে, ২৫ বছর বয়সী মুগ্ধর মৃত্যুর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হয়। মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার এসব মৃত্যুর বিচার দাবি করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই থেকেই উত্তাল বাংলাদেশ। পরে এই আন্দোলন রূপ নেয় সরকারপতনের আন্দোলনে। আর এই আন্দোলন-বিক্ষোভে অন্ত ৩০০ জন মারা গেছে। গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২৩ বছর বয়সী ফারাহ পর্শিয়া সিএনএনকে বলেন, ‘একের পর পর হত্যার ঘটনা ঘটছিল, আর সবাই চুপ করে ছিল। আমরা নিজেদের জন্যই প্রতিবাদে নামি। আমরা প্রতিবাদ করেছি গণতন্ত্রের জন্য। হুট করেই আমাদের প্রবল শক্তি আসে। এত বছর ধরে সবাই কেমন চুপসে ছিলাম।’
এরই মধ্যে গত ৮ আগস্ট শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
আন্দোলনে নিহতদের পরিবার থেকে এখন দায়ীদের শাস্তি দাবি করছে। এর মধ্যে মুগ্ধর যমজ ভাই স্নিগ্ধ একজন। তিনি বলেন, ‘সে শুধু আমার ভাইই ছিল না, সে ছিল আমার কাছের বন্ধু। সে ছিল আমার শরীর ও আত্মার অংশ।’
মুগ্ধ ছিলেন গণিতে স্নাতক, পড়ছিলেন এমবিএ। তাঁর যমজ ভাই পড়ছিলেন আইন নিয়ে। দুই ভাই মিলে স্বপ্ন দেখতেন মোটরসাইকেলে করে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর।
ভ্রমণের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে দুই ভাই অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতেন। কিন্তু মুগ্ধকে ছাড়াই এখন একলা চলতে হচ্ছে স্নিগ্ধকে। ভাইয়ের সাথে স্বপ্ন পূরণ আর হয়নি স্নিগ্ধর।
ছবিটি জুম করে বলুন এটি নারী না পুরুষ? এটি বলে দেবে আপনি মানুষ হিসেবে কেমন
মুগ্ধর মৃত্যুর সময় তাঁর গলায় ঝুলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড। অন্ধকার দিনের প্রতীক হিসেবে শুকিয়ে যাওয়া রক্তমাখা আইডি কার্ডটি সযত্নে রেখে দিয়েছে তাঁর পরিবার। আন্দোলনে মুগ্ধ যে প্রভাব ফেলেছে, তা থেকেই সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।