জুমবাংলা ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে বিচারিক আদালতে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখার মাঠে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ বদরুউদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয়, আমাদের মাথার তাজ, তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার বিচার চাই। আল্লাহতায়ালার কাছে চাই, দুনিয়াওয়ালাদের কাছেও চাই।
‘যেভাবে আমাদের দলের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে, এইভাবে অন্য কোনও দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়নি। এ দেশের সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের নিচে চাপা পড়া মানবতাকে আল্লাহতায়ালা উদ্ধার করেছেন। আল্লাহতায়ালা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হয়, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার পরের দিনই নারীদের ডেকে ডেকে ঘরে তালা মেরে রাখা হবে। আমরা কে তাদের ঘরে তালা মেরে রাখার? ভয় দেখানো হয়, এরা রাজ্য কায়েম করলে সবাইকে জোর করে কালো বোরকা পরানো হবে। কাউকে জোর করে কালো বোরকা পরানো হবে না। মনের খুশিতে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে যারা বোরকা পড়তে চায় পরবে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আল্লাহতায়ালা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানদের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষের হাতে আবার হারানো পথ তুলে দিয়েছেন। আমাদের এই সন্তানদের জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের সব ভালোবাসা তাদের জন্য, আমাদের শ্রদ্ধা তাদের জন্য, আমাদের কৃতজ্ঞতা তাদের জন্য। আমাদের ছেলেদের স্লোগান ছিল, “বুকের মধ্যে দারুণ ঝড়/ বুক পেতেছি গুলি কর”। আমাদের সন্তানদের সেই বুক চিতিয়ে গুলি খাওয়ার কথা আমরা কোনোদিন ভুলে যেতে পারবো না। তাদের প্রতি আমরা সারাজীবন সম্মান জানাবো।
‘তারা চেয়েছিল বৈষম্যবিহীন সমাজ। যেখানে নিচতলা আর গাছতলা থাকবে না। বরঞ্চ অধিকার তার ঘরে চলে যাবে। সেই সমাজকে গড়তে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্য লাগবে। আমাদের সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সমাজে সামাজিক সুবিচার কায়েম করতে হবে। আমাদের সমাজকে মানবিক সমাজে পরিণত করতে হবে। বিশেষ করে যুবসমাজের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, ‘তারা আলেম-ওলামা, কোরআনের মুফাসসিরসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তারা বলতো, এই দেশ তাদের আর আমরা ভাড়াটিয়া। তারা বলতো, এই দেশকে ৪১ সাল পর্যন্ত লিজ নিয়েছে। পাঁচ বছর পর জনগণ রায় দেবে সেই ব্যবস্থাও তারা রাখেনি। ২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে কুকুর দেখা গেলো, তারপরও তারা বলল ৪২ পার্সেন্ট ভোট পড়েছে। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেল ভোট দেওয়ার আগেই।
‘এরপরে ২০১৮ সালে সবকিছু সাজানো-পাতানো, রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের সন্ত্রাসীরা। তারপরেও তাদের নিজের উপর, জনগণের উপর আস্থা নেই। ৩০ ডিসেম্বর দিন পর্যন্ত ভোট দেওয়ার মতো সময় নেই, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই খালাস। বিশ্ববাসী এই ভোটকে বলেছে মিডনাইট ইলেকশন। এরপর ২০২৪ সালে আর কোনও ইলেকশনের প্রয়োজনই পরলো না। ডামি আর মামু, দুইজনে মিলিয়ে ইলেকশন। তারা নির্বাচনকে, এ দেশের সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তামাশায় পরিণত করেছে। বিচার বিভাগকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা বলতো, ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ক্ষমতা হারানোর দুদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। ৫ আগস্টের পরে কি সেটা হয়েছে? হয়নি কারণ, আওয়ামী লীগের মতো এ দেশের মানুষ দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। আওয়ামী লীগ দেশকে ভালবাসলে তারা পালিয়ে যেতো না। আমাদের নেতৃবৃন্দ দেশকে ভালোবাসেন বলেই পালিয়ে যায়নি। বরং মীর কাশিম আলী আমেরিকা ছিলেন। তার বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, আপনি দেশে আসলে আপনার সঙ্গেও নিষ্ঠুর আচরণ করা হবে। তারপরেও তিনি দেশে এসে হাসিমুখে শাহাদাৎ বরণ করেছেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।