স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে ভক্তদের দাবি ছিল জাতীয় দলে দেশি কোচদের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে। জোরেশোরে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম উচ্চারিত হয়েছে অসংখ্যবার। কিন্তু কখনো বিসিবির অনাগ্রহ কখনো সালাউদ্দিনের অনাগ্রহের কারণে সংযোগ স্থাপন হয়নি। অবশেষে বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে সভাপতি ফারুক আহমেদ তাকে ফিরিয়েছেন।
সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে গতকাল মিরপুরে সালাউদ্দিন হাজির হয়েছিলেন গণমাধ্যমের সামনে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মন্তব্য জানিয়েছেন তিনি। ক্রিকেটারদের সমস্যা এবং সেগুলো সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন।
জাতীয় দল ব্যর্থ হলেই ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘মানসিকতা পরিবর্তনের বিষয়টি শুরু থেকেই করতে পারলে ভালো হয়। অনেক সময় যেভাবে মানসিকতা তৈরি হয়, সেটা একটা বয়স পরে ভাঙা খুব কঠিন হয়। বেড়ে ওঠার সময়ে এটা করতে পারলে ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা খুব ভালো থাকত। কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ বা ১৭-এর সময়ে শেখানো গেলে পরবর্তী সময়ে জাতীয় দলে এসে কিছু বলতে হয় না। নিজেরাই সেভাবে গড়ে উঠত। আমাদের কোচিং ব্যবস্থাটা চামচ দিয়ে খাইয়ে দেওয়ার মতো। আমরা নিজেরাই তুলে তুলে খাই, এই ব্যবস্থার কারণে পরবর্তী ছেলেদের খুব সমস্যা হয়। এটা যদি একটু উন্নতি করা যায়, যেখানে ছেলেরা নিজেরা নিজেরা স্বতন্ত্র হয়ে গড়ে উঠবে অল্প বয়স থেকে। তখন জাতীয় দলে এসে তাকে কিছু শিখিয়ে দিতে হবে না। যে কোনো অবস্থায় সে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।’
এর আগে সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। কারো অধীনে থেকে কাজ করতে পারবেন না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কথায় জাতীয় দলে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। এই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, এখনই সঠিক সময়। আমি হয়তো কোচিং আর বেশি দিন না-ও করতে পারি। হয়তো আর ৪-৫ বছর করব। আমার মনে হয়, এখনই সঠিক সময়। আমার দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে আমি যদি আরো একটা প্রজন্মকে সহযোগিতা করতে পারি, তাহলে সেটা আমার নিজের কাছেও ভালো লাগবে। কারণ, আপনি জেনে গেলেন, কিন্তু কোনো প্রদীপ জ্বালালেন না, সেটা তো ঠিক হবে না। এই কাজটা যদি ভালোভাবে করতে পারি, কিছুটা সহায়তা হলেও সেটা আমার সার্থকতা।’
নতুন দায়িত্ব পেয়ে দল চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু দলে প্রধান কোচ রয়েছেন, তিনি কীভাবে দল চালাচ্ছেন সেখানে সহযোগিতা করা। আগের বারের তুলনায় হয়তো আমার দায়িত্বটা একটু আলাদা হবে। চেষ্টা করব, আমাদের ছেলেরা যেন আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হয়। সেই সঙ্গে আমাদের যে বিদেশি কোচরা আছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা যেন আরেকটু ভালো হয়, সেদিকে আমি লক্ষ্য রাখব।’
বাংলাদেশ দলের হয়ে এক সময়ে মাঠে রাজত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফী বিন মর্তুজারা। এখনো তাদের কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই পঞ্চপাণ্ডবের পরে তাদের জায়গা নেওয়ার মতো তরুণ খেলোয়াড়দের অভাবে ভুগতে হয় টাইগার বাহিনীকে। এই বিষয়ে কোচ সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘যখন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা আসছিল, তখন তারা তো সেরা খেলোয়াড় হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিশ্রম, ইচ্ছা, নিজের অনুপ্রেরণার কারণে তারা একটা পর্যায় পর্যন্ত আসছে। বর্তমানে ছেলেদের যে ঐ অনুপ্রেরণা নেই, সেটা কখনো বলা যাবে না। তাদের অনেক ইচ্ছা হয়তো আছে। তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে একদিন না একদিন তারা বড় তারকা হিসেবে আবির্ভূত হবে। চেষ্টা করতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। সবাইকে বলব একটু আশাবাদী হতে।’
সালাউদ্দিনের নিয়োগের পরে বিসিবি সভাপতি ফারুক দেশি কোচদের নিয়ে বলেছিলেন তাদের জন্য এই রাস্তা কেবল শুরু হয়েছে। সালাউদ্দিনও দেখছেন দারুণ ভবিষ্যৎ, ‘এখন কোচরা অনেক ভালো কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরো ভালো সুযোগ আসবে। দেশি কোচদের পারফরম্যান্সও অনেক ভালো।
কিছু কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে আমাদের নিজেদেরই উন্নতি করতে হবে। সেটি ব্যক্তিগতভাবে নিজেদেরই উন্নতি করতে হয়। এটা কেউ করে দেবে না। কোচিং তো কেবল কৌশলের বিষয় না, এখানে আরো অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয় রয়েছে। সেই বিষয়ে কিছুটা উন্নতি করতে পারলে আমাদের কোচরা ভালো জায়গায় যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।