লাইফস্টাইল ডেস্ক : মুমিনের জীবনে আল্লাহর জিকির বা স্মরণের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর জিকিরকে নামাজ তথা ইবাদতের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে জিকিরের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে জিকিরের মর্যাদা।
যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)
জিকির দ্বিন পালনে সহায়ক
আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য শরিয়তের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় জানান, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারি। তিনি বললেন, সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহর জিকির দ্বারা সিক্ত থাকে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)
হাদিসবিশারদরা বলেন, সাহাবির সমগ্র শরিয়তের ব্যাপারে অনুযোগের উত্তরে নবী করিম (সা.) একটি আমল বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শরিয়তের সব বিধানই আবশ্যক। যার দ্বারা প্রমাণ হয়, আল্লাহর জিকির এমন আমল তা মানুষকে শরিয়তের ওপর পরিপূর্ণরূপে আমল করতে সাহায্য করে।
জিকিরের কল্যাণ ও মর্যাদা
মহান আল্লাহ জিকিরের ভেতর বহুবিদ কল্যাণ রেখেছেন। যেমন—
১. জিকির জীবনতুল্য : মুমিনের জন্য আল্লাহর জিকির জীবনতুল্য। কেননা যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তাদের মৃত বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের জিকির করে এবং যে তার প্রতিপালকের জিকির করেন না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)
২. আল্লাহর স্মরণ লাভ : জিকিরের সবচেয়ে বড় উপকার হলো আল্লাহর স্মরণ লাভ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২)
৩. ফেরেশতাদের আসরে স্মরিত
হওয়া : আল্লাহ তাঁর জিকিরকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের আসরে আলোচনা করেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জনসমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই, যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)
৪. আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় আমল :
আবুদ দারদা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খয়রাত করার চেয়েও বেশি ভালো এবং তোমাদের শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা এবং তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভালো? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলার জিকির। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৭)
৫. মুক্তিদানকারী আমল :
জিকিরের মর্যাদা বিষয়ে মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর জিকিরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোনো জিনিস নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৭)
মর্যাদাপূর্ণ পাঁচটি জিকির
নিম্নে হাদিসে বর্ণিত কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ জিকিরের বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ : মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম জিকির ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর সর্বোত্তম দোয়া ‘আল হামদুলিল্লাহ’।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৩)
২. সুবহানাল্লাহ : সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সঙ্গে উপস্থিত সাহাবিদের বললেন, তোমাদের কেউ কি এক হাজার নেকি অর্জন করতে অক্ষম? উপস্থিতদের একজন প্রশ্ন করলেন, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকি অর্জন করবে? তিনি বললেন, তোমাদের কেউ ১০০ বার তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করলে তার আমলনামায় এক হাজার নেকি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার এক হাজার অপরাধ ক্ষমা করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬৩)
৩. সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি পাঠ করবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করা হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৫)
৪. ইস্তিগফার : আগার আল মুজানি (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কখনো কখনো আমার হৃৎপিণ্ডের ওপর আবরণ পড়ে। তাই আমি দিনে ১০০ বার ইস্তিগফার পড়ি (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০২)
৫. তিলাওয়াত : কোরআন ও হাদিসের বর্ণনাগুলোর আলোকে প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেছেন, কোরআন তিলাওয়াতই শ্রেষ্ঠ জিকির। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘জেনে রেখো, নিশ্চয়ই কোরআন তিলাওয়াতই সর্বোত্তম জিকির। আর তিলাওয়াত দ্বারা চিন্তা-গবেষণা উদ্দেশ্য।’ (আল আজকার, পৃষ্ঠা-১০১)
সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘কোরআন পাঠই উত্তম জিকির। যদি ব্যক্তি সে অনুযায়ী আমল করে।’ (ফিকহুল আদইয়াহ ওয়াল আজকার : ১/৫০)
পূর্বসূরি আলেমরা বলেছেন, জিকির বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহস্বরূপ। কেননা জিকির অত্যন্ত সহজ আমল, যা মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে, অথচ এর কল্যাণ ও মর্যাদা অনেক বেশি। পবিত্র কোরআনে অধিক পরিমাণ জিকির করাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কোরো। যেন তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে তাঁর জিকির দ্বারা জীবন সজীব করার তাওফিক দিন। আমিন।
আলেমা হাবিবা আক্তার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।