জুমবাংলা ডেস্ক : প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মোড়ানো পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত এক মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি গ্রাম—মুনলাই পাড়া। নীল আকাশ, উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলা, আর সাদা মেঘের খেলা—সব মিলিয়ে এক স্বপ্নের মতো দৃশ্যপট। একে অনেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক গ্রাম হিসেবে অভিহিত করেন।
মুনলাই পাড়া শুধু তার সৌন্দর্যের জন্য নয়, পরিচ্ছন্নতার জন্যও বিখ্যাত। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রতিটি বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত কোথাও ময়লা আবর্জনার ছিটেফোঁটাও নেই। ছোট ছোট টিলার ওপরে গড়ে ওঠা বম সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িগুলো কাঠের তৈরি, সরল আর পরিপাটি। বাড়ির চারপাশে থাকে সবুজের ছোঁয়া, বারান্দায় সাজানো থাকে অর্কিডসহ নানা প্রজাতির ফুলগাছ।
এ গ্রামে রয়েছে প্রায় ৫৪টি পরিবার, যারা সবাই বম সম্প্রদায়ের। তারা নিজেদের ঘর যেমন পরিষ্কার রাখে, তেমনি পুরো গ্রামটিকেও পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খলভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে। ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবই তাদের এই অর্জনের পেছনে মূল শক্তি। সবাই মিলে গ্রামের পরিবেশ সুন্দর রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে।
প্রায় ৩০ বছর আগে রুমা উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এসে বসতি স্থাপন করেন বম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। তারাই গড়ে তোলেন এই শান্ত, ছিমছাম পাড়া, যার নাম দেন “মুনলাই”। শুরু থেকেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থানীয়দের যত্নে গ্রামটি হয়ে ওঠে একটি সাজানো-গোছানো আবাসভূমি।
পরবর্তীতে ‘বেসক্যাম্প বাংলাদেশ’ নামের একটি পর্যটন সংগঠন এখানে চালু করে ‘মুনলাই কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম’ নামের প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কিছু বাড়িতে পর্যটকদের জন্য থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশনৃত্যের আয়োজন, ট্রেকিং, ৫৫০ ফুট দীর্ঘ জিপলাইন, নদী ও খালে কায়াকিংয়ের সুযোগও।
মুনলাই ট্যুরিজম প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবান জেলা সদর থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে মুনলাই পাড়ায় পৌঁছানো যায়। রুমা সদর থেকে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র তিন কিলোমিটার গেলে এই অপরূপ গ্রামটির দেখা মেলে। সকালে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িতে রওনা দিলে দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়।
এই গ্রামে রয়েছে পাহাড়ি ইকো কটেজ, যেখানে অবস্থান করলে মিলবে বম সম্প্রদায়ের রান্নার স্বাদ। চাইলে পর্যটকরা রাতে বারবিকিউ বা ক্যাম্পফায়ারের আয়োজনও করতে পারেন। দুই-তিন দিনের জন্য খাবার ও থাকার খরচ প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হতে পারে। বান্দরবান থেকে যাতায়াত বাবদ খরচ লাগতে পারে আরও প্রায় ৪ হাজার টাকা।
মুনলাই পাড়া কমিটির সভাপতি ডেবিট বম জানান, এই গ্রামের মানুষ কখনোই তাদের ঘরে তালা দেয় না। এখানে চুরি নামক শব্দটি যেন অচেনা। কেউ ঘর খোলা রেখেই বাইরে চলে যায়, কিন্তু ঘরের কোনো জিনিসপত্র চুরি হয় না। এমনকি রাতে ঘুমের সময়ও পুরো গ্রাম থাকে নিরাপদ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউ ঘর খোলা রেখে গেলে প্রতিবেশীরা সেই ঘরের দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দেয়। কারণ, বম সম্প্রদায়ের মানুষজন একে অপরকে পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।