জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী বড় চার কোম্পানি পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ৪০ দাম টাকা কমানোর যে ঘোষণা দিয়েছিল, তার তেমন প্রভাব দেখা যায়নি রোজার প্রথম দিন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, চার কোম্পানি পাইকারিতে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজিতে মুরগি বেচবে, যা আগে ছিল ২২০-২৩০ টাকা।
কিন্তু শুক্রবার কারওয়ান বাজারের মত বড় বাজারে খুচরায় ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। আর মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার গলির দোকান ও বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকায়।
বড় উৎপাদকরা ঘোষিত দরের চাইতে এখনও বেশি রাখছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকার কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাদের হাত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মুরগি পৌঁছায়।
কাপ্তানবাজারের পাইকারদের একজন মো. শুভ বলেন, “ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার রাতেও মিল গেইট থেকে মুরগি কিনতে হয়েছে ২০৮-২১০ টাকায়। আমরা তো এখনও ১৯০ টাকায় পাচ্ছি না, তাহলে কীভাবে কমাব।
“আগে কিনেছি ২২০ টাকার কাছাকাছি, এখন ২০৬-২১০ টাকা। ১০-১৫ টাকার একটা পার্থক্য মার্কেটে আসছে। আশা করি, সামনেও আসবে। পাইকারিতে ১৯০ প্লাস হবে।” তার অভিযোগের বিষয়ে বড় কোম্পানিগুলোর বক্তব্য জানতে পারেনি।
খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নতুন দরের ঘোষণা এলেও তার প্রভাব পড়তে সময় লাগবে।
মিরপুরে ভ্যানে ফেরি করে গলিতে গলিতে মুরগি বিক্রিকারী বেলায়েত মিয়া বলেন, “আমি যেমন কিনমু, তেমন বেচমু। আজকে ২৫৫-২৬০ বেচতাছি। ১৯০ এর আলাপ আমার সাথে করে লাভ নাই। লস নিতে তো আর গাড়ি নিয়া রাস্তায় ঘুরি না।”
তার কাছ থেকে মুরগি নেওয়া কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরাফাত রহমান বলেন, “ঘোষণা একটা দিয়ে দেয়, কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রভাব থাকে না। এসব ঘোষণা দিয়ে কী লাভ?”
তবে ব্রয়লার মুরগির ‘অস্বাভাবিক’ দামের কারণে ক্রেতা যে কমেছে তা মানছেন খুচরা বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, “বসে বসে মশা মারতেছি। যে রকম ক্রেতা রমজান মাসে থাকার কথা ছিল- তা নাই।
“এত দামে মুরগি কিনে যদি বসে থাকা লাগে তাহলে পুঁজি থাকবে না। কাস্টমার যা আসে, তাতে ব্যবসা করে খরচ দিয়ে পোষায় না।”
‘পোষাচ্ছে না’ পাশের দোকানি মো. সুমন হোসাইনেরও। তিনি বলেন, “ঘোষণা যে তারা দিয়ে দেয়, আমাদের কথা ভাবে না। আমরা যে বেশি দামে কিনি- এখন কমাতে বললে আমাদের তো লস। আমি আজকে ২৩০ টাকা কেজিতে মুরগি কিনছি।
“সকালে ভোক্তা (অধিদপ্তর) এসে বলে গেছে ২৪০ টাকা কেজির বেশি না নিতে। কেজিতে ১০ টাকা লাভ করে দোকানের খরচ, স্টাফের খরচ দিয়া আমার চলে না। ২৫০ এর নিচে বেচলে আমি লসে থাকব। আমার এই লস দেখার কে আছে?”
নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও কেন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইসমাইল বললেন, “আজ আমরা কাপ্তান বাজার থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি কিনে এনেছি। কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা মিলগেটে গিয়ে মুরগি কিনে আনে।
“তারা নতুন দামে কিনতে পারেনি বলে আমাদেরও দিতে পারেনি। যেদিন থেকে নতুন দামে আমরা মুরগি কিনতে পারব, সেদিন কম দামে খুচরা বিক্রি হবে।”
তবে দামের এমন চক্রে চূড়ান্ত ক্ষতি মানতে হচ্ছে ক্রেতাকেই। মুরগি কিনতে এসে ২৪৮ টাকার নিচে বিক্রেতাকে নামাতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করে সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, “কোনোকিছুই কাজে আসছে না। তার বলছেন, এর নিচে বেচার সুযোগ নাই।
“এখন আমার তো নিতে হবে। যে দামই নিক, নিতে হবে। হয়ত আগে একটু বেশি খেতাম, এখন কম খাব বা খাচ্ছি, আর কিছুই না।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।