বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : চেষ্টা করলে মহাকাশ থেকে চীনের প্রাচীর দেখাই যায়, তবে চেষ্টা করলেও মহাকাশ থেকে পৃথিবীর কোনও গায়কের গান বা সুর কি শোনা সম্ভব? সম্প্রতি এক রহস্যজনক শব্দ শুনতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা শুনলে মনে হতে বাধ্য যে কেউ হয়তো মহাকাশে গুনগুন করে গান গাইছেন! আর এরপরই বহু দেশের বিজ্ঞানীরা এমনও মনে করছে, হয়তো সৌরজগতেরই অন্য কোনও প্রান্তে লুকিয়ে ভিনগ্রহের প্রাণীরা, তাদের গানই এসে পৌঁছচ্ছে এত দূর…
গান নয়, আসলে এটা প্লাজমা রশ্মি বিস্ফোরণের শব্দ―জানাচ্ছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরাই। তবে পৃথিবী নয়, সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহের চারপাশে নাকি শোনা যাচ্ছে এই অদ্ভুত শব্দ। কার্নাজওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিতসুনোরি ওজাকি এবং জাপান ও ফ্রান্সের সম্মিলিত গবেষকদল সর্বপ্রথম এই ‘সুর’ আবিষ্কার করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে পৃথিবী, বৃহস্পতি, শনি বা ইউরেনাস-নেপচুন, সর্বত্রই এই ধরনের প্লাজমার সুর শোনা গেছে। তবে বুধের ক্ষেত্রে এই ঘটনা এই প্রথম বলে জানাচ্ছে বিজ্ঞানীরা।
সৌরজগতে সূর্যের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার দরুণ সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও সৌরঝড়ের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বুধে। পাথরের বিশাল একখণ্ড এই গ্রহে নেই কোনও বায়ুমণ্ডল, নেই শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। আকর্ষণ বলয় না থাকা সত্ত্বেও প্লাজমা কণা ধাক্কা খেয়ে কীভাবে তুলছে সুরের লহরী, তা জানতে উৎসুক গবেষকরা। প্রসঙ্গত, এই বছরের শুরুতেই বিজ্ঞানীদের চোখে পড়েছে এক বিশেষ ধরনের ‘অরোরা’, বুধে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র না থেকেও কীভাবে এই অরোরা গঠিত হল, তাই ভাবাচ্ছে মহাকাশ গবেষকদের।
১৯৭০ সালে ‘মেরিনার ১০’ বুধে যাওয়ার পর প্রথম এই গ্রহের সামান্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়। ২০১৮ সালে ‘মার্কারি বেপিকলম্বো মিশন’ শুরু করেছে বিজ্ঞানীরা এবং আপাতত সকলেই এই মিশনের দিকে তাকিয়ে। এই মিশনে ব্যবহৃত MIO-এ কি পারবে বুধের চৌম্বকীয় আকর্ষণ বলয়ের রহস্যভেদ করতে? উত্তর এখনও পর্যন্ত ‘না’! ২০২১ ও ২০২২ সালে বুধের খুব কাছে পৌঁছলেও সৌরঝড়ের চোটে ভালভাবে পরীক্ষাই করতে পারেনি এই বেপিকলম্বো।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়েই বিজ্ঞানীদের নজরে আসে (বলা ভাল কানে আসে) ওই অদ্ভুত সুর। গবেষকদের মতে, ‘পৃথিবী ও বুধে এহেন সুরের নেপথ্যে একইরকমের ইলেকট্রন-ঢেউ থাকতে পারে।’ নেচার জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক, ‘যেসকল গ্রহের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সৌরঝড় ও সূর্যের তেজস্ক্রিয়তা। এক্ষেত্রে বুধের জন্যও কি একইরকম প্রভাব বিস্তার করেছে জন্মদাত্রী সূর্য? তা সময়ই বলবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।