মধ্যযুগের মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী আল জাহরাউয়ি। যিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ‘কিতাব আল তাশরিফ’ এর লেখক আল জাহরাউয়ি। এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী বদলে দিয়েছিলেন মধ্যযুগীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ধারা। তিনি সার্জারি থেকে শুরু করে মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, অপথ্যালমোলজি, অর্থোপেডিকস, প্যাথলজি, দন্তবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, শিশু চিকিৎসার কলাকৌশল দেখিয়েছেন। আল তাশরিফ গ্রন্থের পেছনে জাহরাউয়ি তার পুরো জীবনই ব্যয় করেছেন বলা চলে।জানা যায়, এই গ্রন্থটি লিখতে আল জাহরাউয়ি-এর লেগে যায় প্রায় ৫০ বছর।
নিউরোসার্জারি এবং নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসায়ও জাহরাউয়ির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মূলত তিনিই ছিলেন ইসলামি স্বর্ণযুগের সবচেয়ে বড় নিউরোসার্জন। আল জাহারাউয়ি তার জীবনে অসংখ্যবার মাথার আঘাত, মাথার খুলির অস্থিতে ফাটল, মেরুদণ্ডীয় জখম, হাইড্রোসেফালাসের সমস্যার চিকিৎসা করেছেন।
আল জাহারাউয়ি এসব চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে এমন কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রায়োগিক পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, যেগুলোর একটা বড় অংশ এখনো নিউরোসার্জারিতে ব্যবহৃত হয়!
আল জাহরাউয়ি মূত্রথলীর পাথর অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ‘মিশাব’ নামক একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যা কিনা এই যুগের লিথোট্রাইটের মতো। এই যন্ত্র দিয়ে আল জাহারাউয়ি কোনো কাটাছেঁড়া ছাড়াই মূত্রথলীর ভেতরেই পাথর ভেঙে ফেলতে পারতেন। বলা হয়ে থাকে এটিই ছিল ইতিহাসের প্রাথমিককালের লিথোটমি বা কাটাছেঁড়াবিহীন মূত্রথলির পাথর অপসারণ।
আল জাহারাউয়ি দন্তচিকিৎসাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মুসলিম চিকিৎসকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই দাঁত অপসারণের অস্ত্রোপচার সঠিকভাবে বর্ণনা করে গেছেন। এই বিজ্ঞানী ব্রোঞ্জ এবং রূপা দিয়ে দাঁত বাঁধাই করতেন। আধুনিক যুগেও তার চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। বলা হয় পৃথিবীর প্রথম সফলভাবে দাঁত ‘ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ করা চিকিৎসক।
এসব অস্ত্রোপচারে তিনি ২০০ এর অধিক সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছেন। যেগুলোর একটি বড় অংশ আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। সব শেষে বলা যায়, শল্যচিকিৎসা আলাদা করে না বলে, চিকিৎসাশাস্ত্রই আল জাহরাউয়ির নিকট চিরঋণী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।