মুফতি ইবরাহিম সুলতান : যেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও নিকটাত্মীয়রা মিলেমিশে বাস করে, তা-ই পরিবার। তা ছাড়া পরিবার হলো সমাজের ভিত ও আদর্শ মানুষ গড়ার পাঠশালা। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলাম বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
দ্বিনদার নারীকে বিয়ে করা
আদর্শ পরিবার গঠনে প্রধানত একজন নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। একজন আদর্শ স্ত্রী ও নারীকে কেন্দ্র করেই একটি ভালো পরিবার গড়ে ওঠে। ঘর ও পরিবারের শান্তির জন্য দ্বিনদার নারী বিয়ে করার বিকল্প নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়—তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বিনদারী। সুতরাং তুমি দ্বিনদারীকেই প্রাধান্য দেবে, নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)
নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলা
নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তা ছাড়া নামাজ মানুষকে নানা রকমের অন্যায় পাপাচার থেকে বিরত রাখে। যার ফলে পরিবার ও সমাজে শান্তি বজায় থাকে। পবিত্র কোরআনে নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দিই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১৩২)
পর্দার বিধান মেনে চলা
পর্দা নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়। ঘর থেকে বের হওয়া ছাড়াও পরিবারে বসবাসরত গাইরে মাহরামের সামনে পর্দার বিধান মেনে চলা ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণ না করে। মুমিনরা, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
পরিবারের ছোট-বড় সদস্যদের মধ্যে স্নেহ ও শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বড়রা ছোটদের স্নেহ করবে আর ছোটরা বড়দের সম্মান করবে। তাহলে একটি সুন্দর পরিবারের নমুনা গড়ে উঠবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৫৪)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও সদাচরণ করা
পরিবারের লোকজন একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সদাচরণের মাধ্যমে নিজেদের সম্পর্ককে আরো উন্নত করতে পারে। পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে পারে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে যথাযথ হক পালনে সচেতন হলে সুখী পরিবার গঠন করা অসম্ভব কিছু নয়। তা ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে মানুষের হায়াত ও রিজিকে বরকত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সুখময় দাম্পত্য জীবন দান করুন।
সূত্র : কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।