আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৪৮ সালে বিজ্ঞানীরা ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি বিশালাকার মাধ্যাকর্ষণজাত গর্ত (গ্র্যাভিটি হোল) আবিষ্কার করেছিলেন। এরপর এই রহস্যময় গ্র্যাভিটি হোলের সৃষ্টি ও প্রভাব নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি সম্ভাব্য তত্ত্ব প্রকাশ করা হয়েছে।
গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী বিগ থিংক-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গ্র্যাভিটি হোল মূলত কোনো গর্ত নয়। বরং এটি প্রায় ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সমুদ্রের একটি এলাকা, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে অনেক কম। এই বিশাল অঞ্চলটি গোটা ভারতের মূলভূখণ্ডের চেয়েও বড়। এখানকার পানির গড় উচ্চতা সমুদ্রের অন্যান্য অংশের চেয়ে ৩৪৮ ফুট কম। এই অংশে জড়ো হয়েছে বাতাস। প্রাচীন অতিমহাসাগর টেথিসের অংশ থেকে এই গ্র্যাভিটি হোলের সৃষ্টি।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ভেবেছিলেন, সমুদ্রতলের কোনো কিছুর প্রভাবে এই অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্র্যাভিটি হোল কীভাবে তৈরি হয়েছে সে রহস্য সমাধান করতে গর্তের নিচে নয়, বরং চারপাশে নজর দেয়া প্রয়োজন ছিল। এই গ্র্যাভিটি হোলকে বলা হয় ‘ইন্ডিয়ান ওশান জিওড লো (আইওজিএল)’।
ভারত মহাসাগরের গ্র্যাভিটি হোল ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীদের রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়েছে।
জার্মান রিসার্চ সেন্টার অফ জিওসায়েন্সেসের গবেষক বার্নহার্ট স্টেইনবার্গার বলেন, মাধ্যাকর্ষণের মাত্রায় এমন পার্থক্য সাধারণত বিশাল হয় না। কেউ যদি কোনো অসঙ্গতির (মাধ্যাকর্ষণের ক্ষেত্রে) মাঝখানেও দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপরও তিনি এটি লক্ষ্য করতে পারবেন না। তবে প্রায় ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সমুদ্রস্তর যখন পার্শ্ববর্তী সমুদ্রগুলো থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ ফুট নিচু হয় তখন তা অবশ্যই ভয়ঙ্কর।
প্রায় ১৪ কোটি বছরে গ্র্যাভিটি হোলের চারপাশে কীভাবে টেকটনিক প্লেটগুলোর স্থান পরিবর্তন হয়েছে তার ১৯টি পরিস্থিতি দুই গবেষক তৈরি করেন।
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স-এ প্রকাশিত তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল কয়েকটি পরিস্থিতি গ্র্যাভিটি হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে এবং সেগুলোর কোনটিতেই ওই হোলের সরাসরি নিচের কোনো বস্তুর কারণে নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ তৈরি হয়নি। বরং তারা খুঁজে পেয়েছেন, গর্তটি সম্ভবত কম-ঘনত্বের উত্তপ্ত ম্যাগমার প্লুমের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
বার্নহার্ট স্টেইনবার্গার বলেন, এটি এমন কিছু যা কেউ আগে ভাবেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্র্যাভিটি হোল সৃষ্টির সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা ১২ কোটি বছর আগে প্রাচীন অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানা পৃথক হওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সৃষ্টি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।