আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ যেন এক মায়াবী গুহা। ঢুকলে মনে হবে ভিতরে মেলা বসিয়েছে লাখ লাখ জোনাকি। যার জেরে প্রায় অন্ধকার ওই গহ্বর হয়ে উঠেছে নীলাভ। নিউ জিল্যান্ডের ওয়েটোমো গুহার পরতে পরত রয়েছে রহস্য়। যা গোটা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
দক্ষিণ গোলার্ধের এই দেশের ওয়েটোমো নদীর অববাহিকায় রয়েছে একাধিক গুহা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এগুলির পরিচয় ‘গ্লো ওয়ার্ম’ গুহা হিসেবে। গুহাগুলিতে ঢুকলে অদ্ভুত এক নীলাভ আলোর দেখা মেলে। যা গোটা এলাকাকে মায়াবী করে তোলে।
কী ভাবে অন্ধকার ওই গুহায় আলো জ্বলে? আসলে বিশ্বের একমাত্র এই গুহাগুলির মধ্যেই রয়েছে গ্লো ওয়ার্ম নামের বিশেষ প্রজাতির একটি পোকা। জোনাকির মতো এই পোকাগুলিই ওই গুহাগুলিকে আলোয় মুড়ে রাখে।
উল্লেখ্য, নিউ জিল্যান্ড ছাড়া বিশ্বের অন্যত্র পাওয়া যায় না গ্লো ওয়ার্ম। এদের দেহে থাকে লুসিফেরিন নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ। এই পদার্থের জেরেই গুহার মধ্যে আলো ছড়াতে পারে গ্লো ওয়ার্ম।
তবে এখানেই শেষ নয়। বিশ্বের তামাম কীট-পতঙ্গের মধ্যে গ্লো ওয়ার্ম সত্যিই একটা বিস্ময়। এগুলি লার্ভা অবস্থাতেই মুখ নিঃসৃত লালা দিয়ে গুহার ছাদে বাসা বানায়। শুধু তাই নয়, মুখের লালা দিয়ে পুতির মতো দেখতে একটি বস্তু তৈরি করে তারা। যা গুহার ছাদ থেকে সুতোর মতো হয়ে নীচের দিকে নেমে আসে।
উল্লেখ্য, গ্লো ওয়ার্মের এক একটি লার্ভা ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা সুতো তৈরি করতে পারে। প্রাণী বিজ্ঞানীরা এগুলিকে বলেন সনারে। শিকার ধরতে মাকড়শার মতো এই সুতোর জাল বোনে গ্লো ওয়ার্মের লার্ভা।
প্রসঙ্গত, গুহার মধ্যে ঘুরে বেড়ানো অন্য কীট-পতঙ্গদের ফাঁদে ফেলতেই এই সনারে তৈরি করে গ্লো ওয়ার্ম। প্রায় অন্ধকার গুহায় শিকারকে ওই জালের দিকে টেনে আনতে জোনাকির মতো আলো ছড়ায় তারা। যা দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দাবি, গ্লো ওয়ার্ম লার্ভার দেহের শেষ অংশ থেকে বের হয় আলো। শিকার ধরা ছাড়া এই আলো ছড়ানোর আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে তাদের। যৌন মিলনের জন্য আলো ছড়ায় পুরুষ গ্লো ওয়ার্ম। আর ডিম পাড়ার সময় আলো দেয় স্ত্রী গ্লো ওয়ার্ম। তবে ডিম পাড়ার কিছুক্ষণ পরই মহিলা গ্লো ওয়ার্ম মারা যায়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রাপ্ত বয়স্কের চেয়ে একটি ক্ষুধার্ত গ্লো ওয়ার্ম অনেক বেশি আলো ছড়াতে পারে। তাদের শিকার ধরার পদ্ধতিটিও দারুণ। শিকার ওই সুতোয় আটকে গেলেই সুতোটি গিলতে শুরু করে গ্লো ওয়ার্ম। এইভাবে শিকারের কাছে পৌঁছে যায় তারা।
নিউ জিল্যান্ডের ওই গুহাগুলি ছাড়া কেন আর কোথাও গ্লো ওয়ার্ম পাওয়া যায় না, তা অবশ্য আজও বলতে পারেননি গবেষকরা। গুহাগুলির ছাদে এমনভাবে এই কীট লেগে থেকে আলো ছড়ায়, যা দেখে আকাশের নক্ষত্র ভেবে ভুল করতে পারেন যে কোনও ব্যক্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।